সদ্য সমাপ্ত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক জিডিপির প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। গেল অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে জিডিপির প্রান্তিকভিত্তিক হিসাব প্রকাশ করেছে বিবিএস। এ নিয়ে তিন প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির চিত্র পাওয়া গেল। খবর বিডিনিউজের।
গত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। অথচ এর আগে ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেশ কম ছিল।
আর প্রথম প্রান্তিক, অর্থাৎ জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়েও এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছিল। সে সময় বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ে ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ হারে। আর এর আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সে হিসেবে বিদায়ী অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হারে উল্লম্ফন দেখেছে। আর তাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে শিল্প ও কৃষি খাত। এ সময় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ ও কৃষি খাতে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, গত জানুয়ারি–মার্চ সময়ে স্থির মূল্যে জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০১৮–১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আসে মহামারী। তাতে ২০১৯–২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মহামারীর ধাক্কা সামলে ২০২০–২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে। দুঃসময় কাটিয়ে ২০২১–২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২–২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্দশা থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না বাংলাদেশের। প্রাথমিক হিসেবে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ অর্জিত হওয়ার ধারণা দেওয়া হলেও চূড়ান্ত হিসাবে তা ছয় শতাংশের নিচে নেমে যায়।
একইভাবে গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জন্যও ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার, যা পরে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। কিন্তু সেই লক্ষ্যেও পৌঁছানো যায়নি।
সরকার আগে অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রাথমিক হিসাব এবং কয়েক মাস পর চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করত। তাতে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত না বলে অভিযোগ ছিল অর্থনীতিবিদদের। পরে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত মানতে গত অর্থবছর থেকে প্রতি তিন মাসে একবার (প্রান্তিকভিত্তিক) জিডিপির হিসাব প্রকাশ শুরু করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।