চাকরিতে কোটার বিরোধিতায় দ্বিতীয় দিন গতকাল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৮টি রাস্তার মোড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে চার ঘণ্টা পর রাস্তা ছেড়ে গেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার অবরোধ কর্মসূচি না রাখলেও সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ ডাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার সাড়ে ৮টার দিকে দিনের কর্মসূূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। এজন্য আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) সারাদেশে অনলআইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করব। সকল কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। আমরা সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মঙ্গলবার (আজ) বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার পর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট, মৎস্য ভবন ও চানখারপুল মোড় থেকেও সরে যান আন্দোলনকারীরা। পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শাহবাগে অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েন। ফার্মগেটে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। চানখারপুল মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই অবরোধের ফলে রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে গতকাল সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন এবং ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচিও পালন করছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের ৬৫ সদস্যের কমিটি : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন ২৩ জন এবং বাকি ৪২ জনকে সহ–সমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয়েছে।
গতকাল সোমবার এ প্ল্যাটফর্মের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটা বৈষম্যের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সফল করার জন্য সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক টিম গঠন করা হল। পরে সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কদের নিয়ে এই কমিটি আরও বর্ধিত করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।
কমিটির সমন্বয়করা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, মো. মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, আব্দুল হান্নান মাসুদ, আদনান আবির, জামান মৃধা, মোহাম্মদ সোহাগ মিয়া, নুসরাত তাবাসসুম, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, মুমতাহীনা মাহজাবিন মোহনা, আনিকা তাহসিনা, উমামা ফাতেমা, আলিফ হোসাইন ও কাউসার মিয়া।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসেল আহমেদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদুল্লাহ আল গালিব, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের, মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক, ইডেন মহিলা কলেজের সাবিনা ইয়াসমিন।
সহ–সমন্বয়ক হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফাত রশিদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, নিশিতা জামান নিহা, রেজোয়ান রিফাত, মেহেদী হাসান, মো. আবু সাঈদ, নুমান আহমাদ চৌধুরী, রিজভি আলম, সানজানা আফিফা অদিতি, ফাহিম শাহরিয়ার, গোলাম রাব্বি, কুররাতুল আন কানিজ, মিনহাজ ফাহিম, মো. মহিউদ্দিন, মেহেদী হাসান মুন্না, সরদার নাদিম সরকার শুভ, রিদুয়ান আহমেদ, নূরুল ইসলাম নাহিদ, রাইয়ান ফেরদৌস, সাব্বির উদ্দিন রিয়ন, হামজা মাহবুব, এবি যুবায়ের, তানজিলা তামিম হাপসা, বায়েজিদ হাসান, শাহেদ, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, দিলরুবা আক্তার পলি, ঈশী সরকার, ফাতিহা শারমিন এনি, সামিয়া আক্তার, মাইশা মালিহা, সাদিয়া হাসান লিজা, তারেক আদনান।
এছাড়া সহ–সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন ঢাকা কলেজের আফজালুল হক রাকিব, কবি নজরুল সরকারি কলেজের মো. মেহেদী হাসান, সরকারি তিতুমীর কলেজের মো. সুজন মিয়া, বোরহান উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ইব্রাহীম নিরব, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির আতিক মুন্সি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম সুইট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খান তালাত মাহমুদ রাফি, খুলনার বি এল কলেজের সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি।
কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এটা আমাদের কোনো সংগঠন নয়, এটা একটা সমন্বয়ক টিম। কোটা আন্দোলনকেন্দ্রিক কখন প্রোগ্রাম ডাকা হবে, কখন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে তার নির্দেশনা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকের কাজ ভাগ করা থাকবে। কোটা আন্দোলনকে সুশৃঙ্খলভাবে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আমাদের এই কমিটি কাজ করে যাবে।