প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় দুই বছর পর অবশেষে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপন প্রকল্পের সমীক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হচ্ছে। আগামী দিন কয়েকের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের সার্ভেসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। এই সমীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমেই চট্টগ্রামে মেট্রো রেল প্রকল্প ‘উপরে নাকি পাতালে’ হবে সেটা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক উঠে আসবে। ৭০ কোটির বেশি টাকা খরচে পরিচালিত এই সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কার্যক্রম দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুরু করতে দেরি হওয়ায় মেয়াদ ইতোমধ্যে এক বছর বাড়ানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সার্ভে শুরু করার আগে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট নিরসনসহ সার্বিক জীবনযাত্রার গতিশীলতা নিশ্চিত করতে ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল বাস্তবায়নের জন্য শুরুতে সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন লাভ করে। মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি পরীক্ষায় খরচ ধরা হয় ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা প্রদান করবে। বাকি টাকা প্রকল্প সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) প্রদান করবে ৫৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মূল কাজ মাস্টারপ্ল্যান এবং প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা খরচ ধরা হয় ৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া পরামর্শক সেবা ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, আউটসোর্সিংয়ে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া কারিগরি পরামর্শককে ১ কোটি টাকা, পরিবহন পরামর্শককে এক কোটি টাকা ও গাড়ি ভাড়া বাবদ ২ কোটি ২৫ লাখ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এই প্রকল্পের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ বছর। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। কথা ছিল ২০২৪ সালের শেষদিকে সম্ভাব্যতা যাছাই শেষে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ভবিষ্যত নির্ধারন করা হবে।
সবকিছু ঠিকঠাকভাবে এগুলেও প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে শুরুতে বেশ জটিলতা তৈরি হয়। এতে করে শুরুটা আর শুরু করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর গত হয়েছে। নতুন করে প্রকল্প মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে সব ঝামেলা চুকিয়ে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ভাগ্য নির্ধারণে সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু করা হচ্ছে।
কাজ শুরু করার আগে গতকাল কোইকাসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে মাঠ পর্যায়ে সার্ভেসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।
এ সময় চলমান মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং উপ–প্রধান শহর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবু ঈসা আনছারী ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার জহির আহম্মেদ, কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এমআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মীর মোহাম্মদ কামরুল হাসান, ইয়োসিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলহো চুং, জুনহেং জো ও সাঙ্গায়ো লি।
আলোচনার শুরুতে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প এবং কোইকার অর্থায়নে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো–অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাক–সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের তথ্য উপস্থাপন এবং আলোচনা করা হয়।
সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে বসবাসযোগ্য করার লক্ষ্যে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাই মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য শুধুমাত্র বিদ্যমান শহরকে মাথায় রেখে এগুলে হবে না, বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
তিনি মেট্রোরেলের পাশাপাশি সার্কুলার ট্রেনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প যদি আন্ডারগ্রাউন্ড হয় তবে পরিবেশগত দিক যেমন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ি ঢল হলে কিভাবে সেটি মোকাবেলা করা হবে সেটা পরিকল্পনায় থাকতে হবে। তিনি সার্ভে কার্যক্রমসহ সব ধরণের কার্যক্রমে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস প্রদান করেন।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট হ্রাস এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। পরিবেশবান্ধব মেট্রো সিস্টেম চালু করার মাধ্যমে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গতিশীলতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। মেট্রোরেল হলে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটি নগরীর রাস্তায় পরিবহনের চাপ বহুলাংশে কমিয়ে আনবে। মানুষের সময় বাঁচবে। যা চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের পরই চট্টগ্রামের মেট্রো রেল মাটির উপরে নাকি নিচে হবে সেটি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের ভবিষ্যত, খরচের পরিমান এবং অর্থায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসবে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। তবে শুরু করতেহ দেরি হওয়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোরেলের প্রাথমিক কাজই এক বছর দেরিতে শুরু হতে যাচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।