নগরীর স্টেশন রোডস্থ পাখির গলিতে সাহেদ হোসেন মনা নামে এক যুবক খুনের কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় সামনে এসেছে। এক. মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিরোধ, দুই. নতুন স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাতে ভাতের হোটেলের দখলদারিত্ব এবং তিন. নতুন স্টেশনস্থ পার্কিংয়ে ও পাখির গলিতে পরিচালিত জুয়ার বোর্ড সংক্রান্ত বিরোধ। এ ঘটনায় নিহত মনার বাবা মো. শাহআলম বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন জুয়েল (৩২), রহিম (২৬), জুয়েল প্রকাশ মুরগী জুয়েল (৩২), মো. সজীব (২৪), মো. শেখ ফরহাদ (২২), মো. শুক্কুর (৩৫), হানিফ প্রকাশ মাছ হানিফ (৩৫), সবুজ (৩২), সাগর (২৮), বশির ওরফে টিউমার বশির (৩০), ইকবাল (৩১) এবং শাকিল (২০)। এদের মধ্যে ফরহাদ ও সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিএমপির সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) অতনু চক্রবর্তী আজাদীকে জানান, স্টেশন রোড ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় বেশ কয়েকজন কিশোর–তরুণ নিয়ে গড়ে ওঠা একটি গ্যাংয়ের অন্যতম হোতা সাহেদ। সম্প্রতি নিজেদের গ্রুপের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিরোধের জেরে গ্রুপের আরেক হোতা জুয়েলের সঙ্গে গত রোববার রাতে পাখির গলিতে সাহেদের ঝগড়া হয়। জুয়েলের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত সাহেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অতনু চক্রবর্তী আরও বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, ঘটনার সময় মনা ও জুয়েলসহ অন্তত ২০ জন সেখানে ছিল। আমরা ১২ থেকে ১৫ জনকে শনাক্ত করেছি। এর মধ্যে ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ফরহাদ ও সজীব নামে দুজনকে সকালে রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলার এজাহারে মনার বাবা মো. শাহআলম অভিযোগ করেন যে, গত ১৫/২০ দিন আগে ১নং আসামি জুয়েল ও ২নং আসামি রহিম মনার পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের মোবাইল নিয়ে যায়। এ বিষয়ে মনা জুয়েলকে ফোন করে মোবাইল নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সে মনার সাথে মারমুখী আচরণ করে। বিষয়টি নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ৭ জুলাই রাত নয়টার দিকে মনা তার পোষা বিড়ালের খাবার কিনতে স্টেশন রোডস্থ পাখির গলিতে যায়। জুয়েলের বন্ধু মুরগী জুয়েল এ খবর জানিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আসামিরা জুয়েলের নেতৃত্বে পাখির গলি এসে মনার উপর হামলে পড়ে। মারধরের একপর্যায়ে ১নং আসামি জুয়েল, ৯নং আসামি সাগর, ১০নং আসামি বশির টিউমার বশির ও ১২নং আসামি শাকিল মনার পেটে, কোমরের নিচে, রানে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত মনাকে উপস্থিত লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে পুলিশেরই নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাতে জুয়েল প্রভাব খাটিয়ে একটি ভাতের হোটেল বসিয়েছিল। কিছুদিন আগে মনার ছেলেরা এসে সেটি ভেঙে দেয়। এটি নিয়েই দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
তৃতীয় কারণটি হতে পারে, নতুন স্টেশন সংলগ্ন পাকিংয়ে জুয়েলের নেতৃত্বে একটি জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হয়। অন্যদিকে পাখির গলিতে মনার নেতৃত্বে অপর একটি জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হতো। জুয়ার বোর্ডে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
কারণ নিহত মো. সাহেদ হোসেন মনার বাসা বগারবিল, ব্যবসা দিদার মার্কেট হলেও সে থাকতো রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায়। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও দ্রুত বিচার আইনে আটটি মামলা আছে। কোতোয়ালী থানার করা সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম আছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, কিশোর গ্যাং পরিচালনা, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। ২০২৩ সালের ৯ জুলাই দিনের বেলা প্রকাশ্যে রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকার রয়েল টাওয়ারের সামনে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এক নম্বর আসামি মনা। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মনার নেতৃত্বে একদল কিশোর–তরুণ মারামারির নাটক সাজিয়ে টাকাগুলো ছিনতাই করেছিল। রিয়াজউদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক একাধিক অপরাধ সংঘটনে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্যদিকে রাস্তার অপর পাশে স্টেশন কেন্দ্রিক অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে জুয়েল ও তার বাহিনী। মূলত অপরাধ জগত বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যেই উভয় পক্ষের বিরোধ চরম আকার নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।