চট্টগ্রাম মহানগরে গত চৌদ্দ বছরে চারটি সাংগঠনিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করা একটি কমিটি ছিল পূর্ণাঙ্গ। বাকি তিনটির দুটি আহ্বায়ক কমিটি এবং একটি কমিটিতে সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকসহ ছিলেন মাত্র ৫ জন। এ অবস্থায় গত ১৩ জুন সর্বশেষ (ওই সময় পর্যন্ত) আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার পর দলটির চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের চাওয়া ছিল, নতুন যে কমিটি গঠন করা হবে তা যেন পূর্ণাঙ্গ হয়। একইসঙ্গে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হোক–এমন প্রত্যাশাও ছিল অনেকের। কিন্তু তাদের সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। কারণ আবারও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। গতকাল সকালে এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে মাত্র দুই সদস্যের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। একে তো আহ্বায়ক কমিটি, তার ওপর সদস্য সংখ্যা মাত্র দুই; তাই কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন দলটির তৃণমূলের কর্মীরা। পদবঞ্চিত হওয়ায় অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেন; যা আমলে নেয় কেন্দ্র। এরপর সন্ধ্যায় নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটির আকার ৫১ সদস্যে উন্নীত করার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র।
এ বিষয়ে বিএনপির সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে গতিশীল ও সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত চৌদ্দ বছরের মধ্যে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সভাপতি এবং ডা. শাহাদাত হেসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত কমিটির আকার ছিল পাঁচজনের। নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এরপর ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। যা ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করে এ পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়; যা গত ১৩ জুন বিলুপ্ত করা হয়। সর্বশেষ গতকাল ঘোষণা করা হয় আহ্বায়ক কমিটি।
এদিকে নতুন কমিটি ঘোষণার পর দলটির নেতাকর্মীরা নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও অনেকে দলটির গত আন্দোলন–সংগ্রামে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।
বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, যতদূর পেরেছি সবাইকে সাথে নিয়ে দলের জন্য কাজ করেছি। নতুন নেতৃত্বের প্রতিও প্রত্যাশা থাকবে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, দলের অসংখ্য নেতাকর্মী অসহায়ভাবে দিনযাপন করছেন। হামলা–মামলা ও জেল–জুলুমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশা করছি নতুন নেতৃত্ব তাদের পাশে থাকবেন।
নতুন নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া : আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ গত কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম–৮ আসন থেকে নির্বাচন করেন। তিনি আজাদীকে বলেন, পুনর্গঠন করে দলকে শক্তিশালী করে সবাইকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে কমিটির আকার বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নেওয়া হবে।
এদিকে ১৯৯৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত নগর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন নাজিমুর রহমান। ১৯৯৭ সাল থেকে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তিনটি পৃথক কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি আজাদীকে বলেন, আমাদের মূল কাজ হচ্ছে সবাইকে নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করা। একইসঙ্গে রাজনৈতিক যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা পালন করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো কোটা পূরণ বা ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই তো দলের কর্মী এবং বিএনপি পরিবারের সদস্য। মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ–অপছন্দ থাকতে পারে, কিন্তু সেটাকে প্রাধান্য না দিয়ে আমরা দলকে প্রাধান্য দেব। সাংগঠনিক যোগ্যতা, মেধা এবং দলের প্রতি যাদের কমিটমেন্ট আছে তাদের প্রাধান্য দেব।