মার্কিন মুল্লুকে চট্টগ্রামের ছেলে ইশরাকের গল্প

আরাফাত আনজুম খান নিঝুম | রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

আমেরিকাতে আন্ডারগ্র্যাডে (স্নাতক) পড়তে আসাকেই বাংলাদেশের অনেক স্টুডেন্ট সাফল্য বলে মনে করে। বাংলাদেশিদের মধ্যে এই প্রবণতা আমি বেশি দেখেছি। তারা এখানে আসার পর দেশে থাকাকালীন আগের সেই চেষ্টা, প্রচেষ্টা আর ধরে রাখে না। সবকিছু গ্রান্টেড হিসেবে মেনে নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের স্বপ্নের আমেরিকায় আসল যাত্রা শুরু হয় এখানে আসার পর থেকে। এখন যে অবস্থা আমেরিকায় যেকেউ আসতে পারে। আসাটা বড় ব্যাপার না। এখানে ঠিকে থেকে উন্নতি করাটা বড় ব্যাপার।

আজ একটি ছেলের গল্প বলব, ছেলেটির নাম ইশরাক জামান। চট্টগ্রামের ছেলে। চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট থেকে নটরডেম, সেখান থেকে পেনসিলভানিয়ার ডিকিনসন কলেজে প্রায় ফুল রাইড স্কলারশিপ। থাকা, খাওয়া, এবং টিউশন মিলিয়ে তাকে দিতে হয় নামমাত্র কিছু টাকা। এক প্রকার উড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই ছেলেটি তার ইউনিভার্সিটিতে, অসাধারণ সিজিপিএ, ডিনস্‌ লিস্টে নাম (ইউনিভার্সিটির সর্বোচ্চ পুরস্কার) অনেকগুলো স্টুডেন্ট ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নাম।

এটা গেল তার একাডেমিক জীবন। পেশাগত জীবনে ইশরাক জামানের অর্জনও ভাববার মতো। ইঞ্জিনিয়ারিং থেকেও আমেরিকায় যেই সেক্টর বেশি ডিমান্ডিং, সে সেক্টর হলো ব্যাংকিং বা ফাইন্যান্স সেক্টর। সেই সেক্টরের সবচেয়ে উপরের একটি সেক্টর হলো ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং। এই সেক্টরে ঢুকতে পারার সুযোগ ১% থেকেও কম। প্রতি বছর এই সেক্টরে অনলি ১৫০০২০০০ মানুষ নেয়। আর আবেদন করে থাকে ২ লাখেরও বেশি। এই সেক্টরে রাজত্ব চলে টপ র‌্যাঙ্কিং ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের। স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, ডিউক, ইয়েল, এসব ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েরাই অর্ধেক সিট নিয়ে ফেলে। বাকি থাকে কিছু সিট, যেগুলোর জন্য লড়াই করে বাকি সকল ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা।

সে সেক্টরে ইশরাকের একটা দুইটা না, তিন তিনটা ইন্টার্নশিপ! যেখানে অনেকেই এই সামারে কোনো ইন্টার্নশিপ না পেয়ে বসে আছে, সেখানে ইশরাক অলরেডি ২০২৫ সামারের জন্য ইন্টার্নশিপ হয়ে গেছে! গর্ব করার মতো ব্যাপার। প্রায় ১০০% শিউর এই ইন্টার্নশিপ থেকে ফুলটাইম জবও পেয়ে যাবে ইশরাক। তখন তার স্টার্টিং স্যালারিই হবে আমেরিকার ৭০% মানুষের স্যালারি থেকেও বেশি।

এরকম ছেলেকে দেখলে ভালো লাগে। বুকটা গর্বে ফুলে উঠে। এরাই বিদেশে এসে বাংলাদেশের নাম সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সবাইকে দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ছেলেদেরকে ভালো গাইডলাইন দিলে তাদের পটেনশিয়াল থেকে কি কি আনা সম্ভব! এইসব ছেলেকে আপনি কোন কনসার্টে দেখবেন না, কোন চিল্লাচিল্লিতে দেখবেন না, এরা চুপচাপ কাজ করে যায়, এরাই আমাদের লালসবুজ দেশকে একটা আশা দেখায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীর পূর্ণ নিরাপত্তা চাই
পরবর্তী নিবন্ধএই জনদুর্ভোগের দায় কার?