৭ লাখ টন মৌসুমি ফল উৎপাদনের আশা

পার্বত্য চট্টগ্রাম

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

মৌসুমী ফল আবাদ ও উৎপাদনে দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। দেশের এক দশমাংশজুড়ে বিস্তৃত তিন পার্বত্য জেলার ভৌগোলিক ও প্রকৃতিগত বিশিষ্ট ফল উৎপাদনে উপযোগী হওয়ায় পাহাড়ে নানান প্রজাতির ফল উৎপাদন হয় বছরজুড়ে। গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে আম, কাঠাল ও আনারসের মৌসুম। পার্বত্য চট্টগ্রামের হাঁটবাজারগুলোতে এখন সাপ্তাহিক হাটবারে মৌসুমী ফল বেচাবিক্রির ধুম। কৃষি বিভাগ বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বছরজুড়ে যে সকল ফল উৎপাদন হয়ে থাকে; তার একতৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় এ মৌসুমে। বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান বাড়ায় পাহাড়ে বাড়ছে মৌসুমী ফলের উৎপাদনও।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তিন পার্বত্য জেলায় সারা বছরজুড়ে প্রায় ৪৫ দেশিবিদেশি জাতের ফল উৎপাদন হচ্ছে। এরমধ্যে বেশকিছু জাতের ফল বারোমাসি অর্থাৎ সারাবছর জুড়ে পাওয়া যায়। প্রায় ১ লাখ হেক্টর মৌসুমী ফলের বাগান রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে; সবচেয়ে বান্দরবানে। চলতি মৌসুমী ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে যৌক্তিক মূল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, পাহাড়ের মৌসুমী ফল সুষ্ঠু বাজারজাত করা গেলে দেশে পাহাড়ি ফলের চাহিদা আরও বাড়বে। বিভিন্ন চেকপোস্টে মৌসুমী ফল পরিবহন করা গাড়ি চেকিংয়ের সময় লোহার রড ব্যবহারের ফলে অনেক ফল পচে বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের সুস্বাদু আম ও আনারসের কদর থাকায় অনেকেই বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক ও দায়িত্বশীলভাবে ফল পরিবহনের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ ফল গন্তব্যে পৌঁছার আগেই পচে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চল কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৩৩ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে আম, কাঁঠাল ও আনারসএই তিনটি মৌসুমী ফলের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত ফলের বাগান থেকে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ১৭ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে আম, ৭ হাজার ৪৪২ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল ও ৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে চলতি বছরে ১ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন আম, ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন কাঁঠাল এবং ২ লাখ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

রাঙামাটি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা বাজারের কয়েকজন খুচরা আম বিক্রেতা জানান, এ বছর পাহাড়ে আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। খেতে মিষ্টি, আঁশবিহীন সুস্বাদু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি কদর রয়েছে আম্রপালি আমের। এছাড়া রাঙগুই, সূর্যমুখীসহ নানা জাতের আম বাজারে রয়েছে। বিভিন্ন আমের প্রজাতিভেদে খুচরামূল্যও আলাদাআলাদা। গড়ে ৫০১৫০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি কম আম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল বলেন, রাঙামাটি কৃষি অঞ্চলে প্রায় এক লাখ হেক্টর ফলজ বাগান রয়েছে। এক জমিতে বিভিন্ন মৌসুমী ও বারোমাসি ফল আবাদ হয়ে থাকে। এই সময়ে মৌসুমী ফলের আম, কাঁঠাল, আনারস ও বাতাবিলেবু উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে আম, কাঁঠাল ও আনারসের সংগ্রহ হচ্ছে। বাতালি লেবু ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কলা, পেঁপে সারাবছর দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এছাড়া অন্য মৌসুমী ফল তরমুজ, ড্রাগন, কুল, পেয়ারা, কমলা ও মাল্টা বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভ করায় ধীরে ধীরে আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল আরও বলেন, বাগান সৃজনের পেছনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনী স্থাপন করে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে সারা বছরজুড়ে, তার উল্লেখযোগ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কয়েকটি শূন্য পদ ছাড়াও কর্মকর্তা পর্যায়ের জনবল সংকট রয়েছে। কৃষির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেচ সংকট অন্যতম। সেচের পানি সমস্যা নিরসন হলে যেসব জমি অনাবাদি পড়ে আছে সেগুলোও উৎপাদনের আওতায় চলে আসবে। কৃষকদের জন্য কিছু সংরক্ষণাগার তৈরি করা ও ভবিষ্যতে কৃষকদের আরো উৎসাহ দেওয়ার ফলনির্ভর কিছু প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টার তৈরি করা গেলে পার্বত্য এলাকার অর্থনীতিতে বিশাল একটা ভূমিকা রাখা যাবে।

রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ফলের উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ছে। এতে করে কৃষকব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকাচট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পাহাড়ে এসে বাগানের সব ফল কিনে যাচ্ছেন। তবে সুষ্ঠু ও অত্যাধুনিক বাজারজাত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গেলেও পাহাড়ের ফল সুনাম আরও বাড়বে। এছাড়া বিভিন্ন ধাপে ধাপে চাঁদা দেওয়ার ফলে কৃষকব্যবসায়ীর লভাংশ কিছুটা কমে যাচ্ছে। তবুও সব মিলিয়ে পাহাড়ের কৃষকরা অথনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধুরুং খাল থেকে বালু উত্তোলন, বাঁধে ভাঙন
পরবর্তী নিবন্ধক্ষমতায় গেলে প্রত্যয় স্কিম বাতিল করব : ফখরুল