সাংগঠনিক বিরোধ নিরসনে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই পক্ষকে নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সমঝোতা হয়নি। এজন্য পরবর্তী সমঝোতা বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ জুলাই। সেদিনের বৈঠকে নগরীর ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১৫ থানা কমিটির জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে যেতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। উভয় পক্ষ থেকে নামের তালিকা নিয়ে কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে চট্টগ্রামের দুই পক্ষকে জানানো হয়।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৪টায়। বৈঠকে উপস্থিত নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা আজাদীকে বলেন, সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেন। এসময় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা (৭ সহ সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ জন সাংগঠনিক সম্পাদক) কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও গঠনতন্ত্র না মেনে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একতরফা ভাবে গত ১৪ মার্চ গভীররাতে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডে যে কমিটি ঘোষণা করেছেন তা বাতিলের আবেদন জানান।
গতকালের বৈঠকের ব্যাপারে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি সুজিত দাশ আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমাদের (নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উভয় পক্ষের) বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ও গঠনতন্ত্র না মেনে রাতের আঁধারে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডে যে কমিটি ঘোষণা করেছেন তা বাতিল করা জন্য অনুরোধ করেছি। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। এসময় চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছেন, আপনারা কমিটিগুলো বাতিল করলে চার মাস আগে বাতিল করতেন তাহলে সাংগঠনিকভাবে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারতাম। জবাবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, তোমরা যে কমিটিগুলো করেছ সেগুলো আমরা যাচাই–বাছাই করে রেখেছি। কমিটিতে অন্যদল থেকে আসা এবং বিতর্কিত অনেককেই পদ দেয়া হয়েছে। এগুলো তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে।
অনেক আলোচনা শেষে সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু এবং সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নগরীর অন্যান্য ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো করার জন্য আমাদের থেকে নামের তালিকা চেয়েছেন। আমরা আগের কমিটিগুলো বাতিল করে নতুনভাবে নগরীর ৪৪ ওয়ার্ড ও ১৫ থানার কমিটি গঠন করা জন্য উনাদেরকে অনুরোধ করেছি। শেষ পর্যন্ত উনারা আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা আগামী ১৬ জুলাই আস। ঐদিন ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১৫ থানা কমিটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের লিস্ট নিয়ে আস। ঐদিন আমরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদেরকে দুইদিনের সময় নিয়ে যেতে বলেছেন।
ঢাকায় গতকালের বৈঠকের ব্যাপারে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য আজাদীকে বলেন, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আলোচনায় উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় এসেছে। আগামী ১৬ তারিখ আবার ঢাকায় যেতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মার্চ গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ। গভীর রাতে নিজস্ব ফেসবুকে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির অপর গ্রুপের ১২ নেতা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই ১২ নেতা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
এক তরফা ভাবে রাতের আঁধারে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম প্রেসসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই ১২ নেতা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই সময় ১৮ মার্চ নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উভয় পক্ষকে শোকজ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সংগঠনের শৃঙ্খলা এবং গঠনতন্ত্র না মেনে গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করায় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কেন্দ্র থেকে ১৮ মার্চ শোকজ করা হয়েছিল। পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে এই শোকজের সন্তোষজনক লিখিত ব্যাখা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। একই সাথে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্যও ওইদিন নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে।