এবার বেনজীরের পূর্বাচলের বাংলো জব্দ

| রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের একটি বাংলো জব্দ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বয়ে এক অভিযানে দুই তলা বাংলোটি জব্দ করা হয়। এর ফটকে ক্রোক বিজ্ঞপ্তি লেখা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত বহির্ভূত আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সাবেক এ আইজিপির সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুর আলম। এ সময় দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনী উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

শফিকুল সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার স্পেশাল জজ আদালতের নির্দেশে সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে সম্পত্তিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা এ সম্পত্তি আজ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।

জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বিত দলটি বাংলোটির মূল ফটক পেরিয়ে চারদিকে ঘুরে দেখলেও ভবনটি ডিজিটাল লক পদ্ধতিতে বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।

শফিকুর আলম বলেন, এখানে একটি দোতলা ভবন, কিছু কুকুর ও পাখি রয়েছে। ভবনটি ডিজিটাল লক সিস্টেমে বন্ধ আছে। এটি খুলতে উপযুক্ত টেকনেশিয়ান ও যন্ত্রপাতি না থাকায় আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি।

এ সম্পত্তি কী করা হবে তা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে। আপাতত এ রিসোর্ট দেখাশোনার জন্য যে দুজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন তারা সোমবার পর্যন্ত এখানেই থাকবেন বলেও জানান জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।

পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকায় গুতিয়াব মৌজায় পুলিশের আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ছয়টি প্লটের ২৪ কাঠা জমির উপর সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে এ রিসোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছে।

চারপাশে কাঁটাতারসহ সীমানা দেয়াল দেওয়া রিসোর্টের ভেতরে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেঙ বাড়ি রয়েছে। প্রশাসনের সাঁটানো ক্রোক বিজ্ঞপ্তিতে রিসোর্টটির মালিক হিসেবে বেনজীরের কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নাম উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণবাগ এলাকার একটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে এ জমিটি আনন্দ হাউজিং সোসাইটির নামে কেনা হয়েছিল। পরে এ জমিতে বেনজীর ডুপ্লেঙ বাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রায় সময় এ বাড়িতে আত্মীয়বন্ধুদের নিয়ে আসতেন বেনজীর আহমেদ।

তবে তিন মাস ধরে কেউ আসেন না বলে জানান বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রতন মিয়া। ময়মনসিংহের ত্রিশালের বাসিন্দা রতনের শ্বশুরবাড়ি গুতিয়াব এলাকায়। বাড়িটির ফটকের ভেতর একটি ছোট কক্ষে থাকেন তিনি। রতন বলেন, আগে তার (বেনজীর আহমেদ) পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা এখানে আসতেন, থাকতেন। কিন্তু গত তিন মাস কেউ আসেন না। বাড়িটি বন্ধই থাকে। আমরা দুজন সামনের ছোট্ট ঘরটাতে থাকি। ভবনটির ভেতরে ঢোকার পারমিশন আমাদের নেই।

ডেমরাইছাপুরা সড়কের পাশে বেনজীরের এ রিসোর্টের জমির আগের মালিক প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের ছেলে রামধন সরকার বলেন, প্রেমানন্দ সরকারের মৃত্যুর পর তাদের চার ভাই এ জমির মালিক হন। অন্তত ১০ বছর আগে বালু দিয়ে জমিটি ভরাট করে পুলিশের আনন্দ হাউজিং সোসাইটি। পরবর্তীতে এক কোটি টাকা বিঘা দরে ৫৫ শতাংশ জমি কিনে নেওয়া হয়। আমরা তো এ জমি বিক্রি করতে চাইনি। বালু ভরাটের সময়ও বাধা দিছিলাম। কিন্তু তাগো লগে কী আর পারা যায়। পরে উপায় না দেইখা বিক্রি কইরা দিছি। ওই জমিতেই পরে বাড়ি করেন বেনজীর।

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কটি আদালতের নির্দেশে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া বান্দরবানে বেনজীর ও তার মেয়ের নামে ২৫ একর জমিতে পুকুর, বাগান ও খামার বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেখানকার প্রশাসন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজেকে বন্দর থানার এসআই পরিচয় দেন তিনি
পরবর্তী নিবন্ধহঠাৎ ভেঙে পড়ল পুরনো দ্বিতল ভবনের একাংশ