রথযাত্রা নিয়ে কিছু কথা

সুমন মজুমদার | শনিবার , ৬ জুলাই, ২০২৪ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আয়োজিত হয় রথযাত্রা উৎসব। রথযাত্রা হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের) দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির থেকে মাসির বাড়িতে গুন্ডিচা যাত্রাকে বুঝায়। পুরীতে এই রথযাত্রা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে।

জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তিন ভাইবোনের গুন্ডিচা মন্দিরে যা জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি হিসেবে খ্যাত সেখানে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রথযাত্রা শুরু হয়। সাতদিন মাসির বাড়ি থেকে পোড়া পিঠা খেয়ে আবার বাড়ির পথে ফিরে আসা যা ‘উল্টো রথ’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায়, এর শুরু সত্যযুগে। সে সময় ওড়িশার নাম ছিল মালবদেশ। মালবদেশের অবন্তী নগরে ইন্দ্রদুম্ন নামে সূর্যবংশীয় বিষ্ণু ভক্ত এক রাজা ছিলেন। যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরূপী মূর্তির রথযাত্রা শুরু করার আদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজা ইন্দ্রদুম্ন ওড়িশায় অবস্থিত পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রা প্রচলন করেন। পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা প্রতিবছর আমরা দেখে থাকি। তার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশ পরম্পরায় পুরীর রাজ পরিবার আজো আছে। রাজ পরিবারের উপাধিপ্রাপ্ত রাজা উপস্থিত হয়ে দেবতা জগন্নাথ, তার বড়ভাই বলরাম, ছোট বোন সুভদ্রাদেবীর পর পর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও রথের সম্মুখভাগে সোনার ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দেয়ার পর পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। পুরীর রথযাত্রায় তিনটি রথ সমুদ্র উপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির থেকে দুই মাইল দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং সাত দিন পর উল্টো রথের মাধ্যমে ফিরে আসে।

পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার অনুসরণে বাংলায় রথযাত্রার সূচনা হয়। চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। চৈতন্য ভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর আদলে রথযাত্রার প্রচলন করেন।

রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে শাস্ত্রে আছে– “রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে”। অর্থাৎ রথের ওপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথ দেবকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। তাই জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা রথের রশি টানাকে পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রথ টানা শুরু হতেই আশ্চর্যজনকভাবে অনেকটা ভারাক্রান্ত হয়ে ঘন দুখী মেঘ মাটির পৃথিবীতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে মাতোয়ারা হন সনাতন ভক্তরা। রথ থেকে রাস্তায় দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের দিকে ছুড়ে দেয়া হয় কলা আর ধানের খই। ভক্তবৃন্দ ভক্তি সহকারে রথরজ্জুর মাধ্যমে রথকে টেনে নিয়ে যান। রথ টানা মহাপুণ্য বলে সনাতন ধর্মে স্বীকৃত। তাই প্রতি বছরই আমাদের দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মহাসাড়ম্বরে এ রথযাত্রা উৎসব উদযাপন করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউইলিয়াম ফকনার : নোবেল বিজয়ী ঔপন্যাসিক
পরবর্তী নিবন্ধতেলের গুণ