ভরা বর্ষা এলে সত্যিই মীরসরাই উপজেলা এলাকার ঝর্ণাগুলো ফিরে ফিরে আসে ভরা যৌবনে। প্রকৃতি প্রেমিকদেরই আবিষ্কার এই প্রাকৃতিক খৈয়াছড়া ঝরনা বর্ষার ভরা মৌসুমে এখন রূপ নিয়েছে ভিন্ন মাত্রার সুন্দরের। বর্ষা এলে মীরসরাই উপজেলার কয়েকটি ঝর্ণা রুপ নেয় ছোট ছোট নান্দনিক জলপ্রপাতের। সাধ্যহীন কতো মধ্যবিত্ত নায়াগ্রা বা ভারতের চেরাপুঞ্জি যাবার সাধ্য নেই। কিন্তু সাধ্যের মধ্যে দুর্গম পাহাড় মাড়িয়ে আসছে মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া, বোয়ালিয়া বা রুপসী জলপ্রপাতে। বিশেষ করে খৈয়াছরা ঝর্ণার উঁচু স্তর থেকে বৃষ্টির বিশাল জলধারা যখন ব্যাপকতর আকৃতি নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে, তখন এই ঝর্ণাই যেন আনন্দ দিচ্ছে জলপ্রপাত উপভোগের। ঝর্ণার আশেপাশের সকল দর্শনার্থী জলের গুঁড়িতেই স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেন নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে গেলে জলের কণার হিমেল জলীয় হাওয়ায় স্যাঁতস্যাঁতে হিম হয়ে যেতে হয় দর্শনার্থীদের।
এবারের বর্ষায় ও মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো যৌবন ফিরে পাওয়ায় ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন তা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছেন ঝর্ণার রাণী হিসেবে খ্যাত খৈয়াছড়া ঝরনায়। প্রতিদিন দূর–দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে এই ছোট জলপ্রপাতে। দর্শানাথীদের থেকে জানা গেছে, এবারের ঈদের দিন থেকেই বিকেল থেকে সব ঝর্ণায় মানুষের ঢল নামে। তখন বৃষ্টি কম হওয়ায় স্বাধ ছিল ভিন্ন। কিন্তু এখন বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ঝর্ণার রুপ জলপ্রপাতের আকার ধারণ করায় বেড়ে যাচ্ছে সব বয়সী পর্যটক। দলবেঁধে বন্ধু–বান্ধব, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়–স্বজনরা ছুটছেন ঝর্নার রূপ গিলতে। আবার ভ্যাপসা গরমে ঝর্ণার শীতল পানিতে শরীর ভিজিয়ে অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
বর্ষাকালে ঝরনার আকর্ষণ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি থাকে। তবে শীত ও গরমে এর আকর্ষণের কমতি নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব মৌসুমেই উপভোগ করা যায়। প্রতিনিয়ত পর্যটকদেরও ঢল নামে। বিশেষ করে ছুটির দিনে ৩–৪ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটছে এই ঝর্নায়।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝর্ণার অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ধানক্ষেত, আঁকা–বাঁকা পাহাড়ি পথ, ছড়া ও পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে প্রকৃতির এই বিস্ময় সান্নিধ্যে। খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, স্থানীয় ভুঁইয়া টিলা নামক স্থানে প্রায় ৫০ বছর ধরে প্রবাহিত হচ্ছে ঝর্ণাাটি। পাহাড়ি ঝোঁপের কারণে মানুষ তখন খুব একটা ওই জায়গায় যেত না। গত ৫–৬ বছর থেকে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। সরেজমিনে জানা গেছে, খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঝরনার রাস্তার মাথায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি বাস, অনেকগুলো মাইক্রো, হাইস, নোহা, প্রাইভেটকার। এসব গাড়ি করে সবাই ছুটে এসেছেন ঝরনায় যাওয়ার জন্য। এর চেয়ে বেশি পর্যটক আসছেন বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাসে করে। ঝর্ণার রাস্তার মুখে নেমে সিএনজি চালিত অটোরিকসা যোগে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন ঝরনায়।
গতকাল শুক্রবার সকালে ও ঢাকা থেকে ১১ বন্ধু মিলে ঝর্ণা দেখতে এসেছেন। তাদের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসনাত খান (২৪) বলেন, ‘দেশের বিখ্যাত অনেক প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখেছি। খৈয়াছড়া ঝর্ণার সৌন্দর্য তা দেশে দ্বিতীয়টি আর আছে কি না আমার জানা নেই।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার ৮টি স্তর আছে। বেশিরভাগ পর্যটক প্রথম ধাপের সৌন্দর্য দেখেই মাতোয়ারা। পাহাড়ের উঁচুতে হওয়ায় বাকি ধাপগুলোতে যাওয়া কিছুটা কষ্টকর বলে অনেকেই ঝরনার প্রথম ধাপের সৌন্দর্য দেখেই ফিরে আসেন। আবার উপরের ধাপ দেখতে চেষ্টা করা মানেই জীবনের ঝুঁকি নেয়া এটা ও সবাইকে মনে রাখতে হবে। নোয়াখালী থেকে আসা দম্পতি রহিমা আক্তার ও আবু হানিফ বলেন, অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ঝর্ণায় আসতে। পাহাড় আর ঝর্ণার সৌন্দর্যে তারাও খুব মুগ্ধ। তবে রাস্তার অসুবিধার কারণে ঝর্ণার আসা কষ্টসাধ্য বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটক দম্পতি।
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতাধীন ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরের জন্য এ ঝর্ণাসহ ৫টি ঝর্ণা ইজারা পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শোমোশন লিমিটেড। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তন্ময় ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে আমাদের প্রতিষ্ঠান ভ্যাটসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতাধীন ৫টি ঝর্ণা ইজারা নিয়েছে। এখন সব ঝর্ণায় মানুষ যাচ্ছে। আমরা প্রতি টিকেট ২০টাকা বিক্রি করছি। তবে বেশি মানুষ যাচ্ছেন খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। এই বর্ষায় একদিনে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ পর্যটক ঝর্ণা গেছেন।