টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের একাদশে তাসকিন আহমেদ না থাকায় তখন আলোচনা–সমালোচনা হয়েছিল অনেক। টসের সময় পরিবর্তনের ব্যাখ্যাও দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কারণ জানা যায়নি পরেও। তবে দল দেশে ফেরার পর জানা গেল আসল কারণ। ঘুম থেকে দেরিতে ওঠায় সেদিন টিম বাস ধরতে পারেননি বাংলাদেশের সহ–অধিনায়ক। তাই মাঠে যেতে দেরি হওয়ায় খেলতেও পারেননি তিনি।
দলের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিশ্চিত করেছেন এই খবর। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পুরো দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তাসকিন। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) খেলতে দেশ ছাড়ার আগে সাকিব আরও জানিয়েছেন, অনিচ্ছাকৃত এই ভুল সবাই স্বাভাবিকভাবে নেওয়ায় তখনই শেষ হয়ে গেছে ওই ঘটনা। অ্যান্টিগায় সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিবর্ণ ছিলেন তাসকিন। সেদিন ১.২ ওভার বল করার সুযোগ পেয়ে দুটি করে চার–ছক্কা হজম করে ২২ রান দিয়েছিলেন তিনি। তবু আগের ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়া পেসারকে পরের ম্যাচে বাদ দেওয়াটা বিস্ময় জাগিয়েছিল।
একই মাঠে ৩৬ ঘণ্টা পর শুরু হওয়া ভারত ম্যাচে দেখা যায় একাদশে নেই তাসকিনের নাম। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর পর অনেক কথার ভিড়ে একটি পরিবর্তনের কথা বললেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। দুই পেসার নিয়ে খেলতে নেমে ওই ম্যাচে ৫০ রানে হারে বাংলাদেশ। পরে আফগানিস্তানের কাছেও হেরে সুপার এইট থেকে খালি হাতে ফেরেন শান্ত, তাসকিনরা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ব্যস্ততায় বেশি দিন দেশে থাকা হয়নি তাসকিনের। তাওহিদ হৃদয় ও মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে এরই মধ্যে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে চলে গেছেন শ্রীলংকায়। গতকাল সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তাসকিনের না খেলার কারণ জানিয়ে পুরো বিষয়টা খোলাসা করেন সাকিব।
তিনি বলেন, আসলে দলের বাস তো একটা নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ে। সাধারণত বাস কখনও অপেক্ষা করে না। যদি কেউ কখনও মিস করে, তারা হয়তো পরের গাড়ি নিয়ে আসে কিংবা ম্যানেজারের গাড়ি থাকে কিংবা ট্যাঙি থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেহেতু একটু ডিফিকাল্ট জায়গা, ওখানে আসলে যাতায়াত সুবিধা একটু কঠিন ছিল। যখন তাসকিন মাঠে পৌঁছেছিল তখন টস হওয়ার ৫–১০ মিনিট বাকি ছিল। ম্যাচ শুরুর খুবই কাছাকাছি সময়ে। স্বাভাবিকভাবে ওই সময়ে ওকে দলে নেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য কঠিন ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে একজন ক্রিকেটার কোন অবস্থায় থাকে, তার জন্যও একটু কঠিন।
বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় দলের সবার কাছে তাসকিনের ক্ষমা চাওয়ার কথাও জানান সাকিব। তাসকিন পুরো দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এটা নিয়ে। দলের সবাই এটা খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। অনিচ্ছাকৃত ভুল সবারই হয়ে থাকে। ও সেটা স্বীকার করেছে। তারপর ওখানেই ওটা শেষ হয়ে গেছে। মূলত ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার কারণে যথাসময়ে টিম হোটেলের সামনে দাঁড়ানো বাস ধরতে পারেননি তাসকিন। তাই সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে ঘুম থেকে তুলে আনার জন্য কাউকে পাঠানো যেত কিনা? সাকিব বলেন কাউকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আনা ক্রিকেটে হয় না। ক্রিকেটের নিয়মে এগুলো নেই যে পুরো দল অপেক্ষা করবে। দল কখনও অপেক্ষা করে না। এটা কোথাও হয় না। আমরা যখন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলি তখন থেকেই দেখেছি বাস নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে দিয়েছে। এখনও মনে আছে আমাদের এমনও হয়েছে যে, ক্রিকেটার পেছনে দৌড়াচ্ছে, কিন্তু বাসের দরজা লেগে গেছে তাই বাস চলে গেছে। বাস কখনও থামে না। একজনের জন্য পুরো দল থেমে থাকে না ।