গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে বাড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এতে বাড়ানো হয়েছে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বিভাগের তথ্য মতে, পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি দিয়েই গড়ে ১৬০–১৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, কয়েকদিনের টানার বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়েছে। এতে বাড়ানো হয়েছে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন হয়েছে ১৬৪ মেগাওয়াট। চারটি ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বিভাগের হিসাবে, ১ ও ২ নম্বর ইউনিটে ৪২ মেগাওয়াট করে ৮৪ মেগাওয়াট এবং ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে কেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। এটি চলতি বছরের সর্বোচ্চ উৎপাদন।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে মঙ্গলবার পানির পরিমাণ ছিল ৮৩ দশমিক ৬৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। যদিও রুলকার্ড অনুযায়ী পানি থাকার কথা ৮৪ দশমিক ১৬ এমএসএল। রুলকার্ডের হিসেবে এখনও পানির কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে সেটাও কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টির মধ্যে পূর্ণ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ১০৯ এমএসএল পানি সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। তবে ১০৪–১০৬ এমএসএল পানি হলে টইটম্বুর হয়ে যায় হ্রদ। তখন কাপ্তাই বাঁধের স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নিগর্মণ করা হয় কর্ণফুলীতে।
প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রমত্তা কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই অংশে বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলে কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদে সংরক্ষণ করা পানি দিয়ে শুরু হয় দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন। শুরুর দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ২৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে। যদিও সরকারি হিসাবে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বলা হলেও কেন্দ্রটি ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ইউনিট প্রতি উৎপাদনখরচ হচ্ছে ৩০–৪০ পয়সা।