মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত শনিবার থেকে নগরীতে কখনো থেমে থেমে আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির সেই ধারাবাহিকতা গতকালও অব্যাহত ছিল। তবে বিকেলের দিকে তীব্রতা কিছুটা কমলেও কালো মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ। এদিকে গতকাল থেকে চট্টগ্রামের শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। বৃষ্টির কারণে পরীক্ষার্থী–অভিভাবকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নগরীর নিচু এলাকার কিছু সড়কে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় যানজটের কবলে পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার হলে পৌঁছতে পারবেন কিনা এ নিয়ে তাদের মধ্যে দেখা দেয় উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা। পরীক্ষার কারণে যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকলেও দ্বিগুণ–তিনগুণ ভাড়া গুণতে হয়েছে। নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে মেয়ে সাদিয়া সুলতানাকে নিয়ে আসেন বহদ্দারহাটের বাসিন্দা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে অনেক কষ্ট সহ্য করে মেয়েকে পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। ভারী বর্ষণের কারণে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তবে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে পেরেছি। জান্নাতুল ফেরদৌস নামে অপর এক অভিভাবক বলেন, সকালে বাসা থেকে হাঁটু পানি মাড়িয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে হয়েছে। এছাড়া রাস্তায় যানজট ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে পারবো কিনা টেনশনে পড়ে যাই।
এদিকে শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ৯৭৫ পরীক্ষার্থী। এছাড়া পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় খাগড়াছড়িতে ৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনজনই দীঘিনালা সরকারি কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ১১৫টি কেন্দ্রে মোট ৯৩ হাজার ১৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নিয়েছে ৯২ হাজার ১৬৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৬৯টি কেন্দ্রে ৬৮ হাজার ৩২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেয় ৬৭ হাজার ৬৫৫ জন। অনুপস্থিত ছিল ৬৭৩ জন। কঙবাজার জেলায় ১৮টি কেন্দ্রে ১১ হাজার ৬৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেয় ১১ হাজার ৫৪৮ জন এবং অনুপস্থিত ছিল ১৩৬ জন। রাঙামাটি জেলায় ১০টি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৬৩৯ জনের মধ্যে অংশ নেয় ৪ হাজার ৫৮৪ জন। অনুপস্থিত ছিল ৫৫ জন পরীক্ষার্থী। একইভাবে খাগড়াছড়ি জেলায় ১০টি কেন্দ্রে ৫ হাজার ২৯৯ জনের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫ হাজার ২৫৪ জন এবং অনুপস্থিত ছিল ৪৫ জন। বান্দরবান জেলায় ৮টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৯৪ জনের মধ্যে অংশ নেয় ৩ হাজার ১২৮ জন এবং অনুপস্থিত ছিল ৬৬ জন পরীক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান জানান, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার দায়ে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সরকারি কলেজ কেন্দ্রের ৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দু’জন মানবিক ও অন্যজন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের।
অপরদিকে দেশব্যাপী সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী আকবর খান বলেন, গত শনিবার ভোর ছয়টা থেকে গতকাল ভোর ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল নয়টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।