কক্সবাজারের চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত চলাকালে বাদী ও বিবাদীপক্ষ তুমুল বিতণ্ডায় জড়ানোর পর দুইপক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিবাদীপক্ষ আদালতের এজলাস কক্ষের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর, বিভিন্ন সালিশি মামলার নথিপত্রও তছনছ করে। এমনকি এজলাসে বসে থাকাবস্থায় চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজও করে বিবাদীপক্ষ। রিদুয়ান নামের এক চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ), স্থানীয় ইউনিয়ন রিষদ সদস্য আলমগীর ছাড়াও বাদীপক্ষের বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহতও করা হয়। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে গ্রাম আদালত বন্ধ করে তাৎক্ষণিক বিষয়টি মৌখিক ও পরে লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান।
এই ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। হামলার সময় আহত পরিষদের গ্রাম পুলিশ রিদুয়ান থানায় এই অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগে জানা গেছে, জমির বিরোধ নিয়ে ইউনিয়নের পহরচাঁদা গ্রামের রিনা আক্তার বাদী হয়ে আকবর হোসেন ও এনামুল হক গং এর বিরুদ্ধে পরিষদে একটি অভিযোগ দেন। এর পর নিয়মানুযায়ী নোটিশ দিয়ে বাদী ও বিবাদীপক্ষকে সালিশকার নিয়োগ দিতে বলা হয়। কিন্তু বিবাদীপক্ষ সালিশকার নিয়োগ না দিয়ে দ্বিতীয় কার্যদিবস তথা গত ২৩ জুন গ্রাম আদালত চলাকালে উপস্থিত হন। বেলা দেড়টার দিকে এই অভিযোগটি নিয়ে শুনানি করার সময় বাদী তার বক্তব্য উপস্থাপন করাকালে কটূক্তিমূলক বিভিন্ন কথাবার্তা ছুঁড়ে দিয়ে বিবাদীপক্ষ ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সেই মুহূর্তে এজলাসে বসে থাকা চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান উভয়পক্ষকে সংযত আচরণ করার নির্দেশ দেন। তখনই এখানে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না মর্মে হৈ চৈ শুরু করে বাদীপক্ষের লোকজন, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলমগীর, গ্রাম পুলিশ রিদুয়ানসহ বেশ কয়েকজনের ওপর হামলে পড়ে বিবাদীপক্ষ। বাদীপক্ষও এই ঘটনার পাল্টা জবাব দেয়। এ সময় তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও বিবাদীপক্ষের লোকজন গ্রাম আদালতের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর, বিভিন্ন নালিশি অভিযোগের নথিপত্র তছনছ করে। এমনকি চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্যে করে গালিগালাজও করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী সদস্য খালেদা বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত চলাকালে বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড অতীতে আর কেউ ঘটানোর সাহস করেনি। এই ধরনের ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতকে অবজ্ঞা ও অসম্মান করার মতোই। চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান বারবার বাদী–বিবাদীপক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এরপরও একটি কুচক্রমহল চেয়ারম্যানকে ঘায়েল করাসহ পরিষদের গ্রাম আদালতের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
এ ব্যাপারে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত চলাকালে একটি ঘটনায় অভিযুক্ত বিবাদীপক্ষ শুরু থেকেই যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করাসহ এজলাসের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিভিন্ন অভিযোগের নথিপত্র তছনছ করেছে, সেই বিষয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় শনিবার (গতকাল) রাতে পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।