পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের সমস্ত অর্জন আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই অর্জিত হয়েছে। ৭৫ বছরের কণ্টকাকীর্ণ পথ চলায় আওয়ামী লীগ সবসময় অগণতান্ত্রিক ও অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের চক্ষুশূল হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারির পর বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার পরও জিয়াউর রহমান ও এরশাদ দুই সামরিক স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছেন। ২০০৭ সালেও ভিন্ন খোলসে সামরিক শাসন চলেছে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০৭ সালে সমাজে বুদ্ধিজীবী পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তিকে ভাড়া করে সামনে দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসনই চালু করা হয়েছিল। সেই সময় দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ বিএনপির দুর্নীতি আর দুঃশাসনের অভিযোগ তুলে যে শাসক এসেছিল, তাদের তো প্রথমে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার কথা। কিন্তু তারা সেটি না করে প্রথমে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সবসময় অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শক্তির চক্ষুশূল ছিল।
বিএনপির সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে আর কিছু নবায়ন করা হয়েছে। কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নাই। আর সমস্ত সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে। অথচ বিএনপির নেতারা গলা ফাটিয়ে বলে যাচ্ছেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মির্জা ফখরুল সাহেব নাকি ঢাকা কলেজে পড়াতেন। বিএনপির আরো কিছু নেতাসহ ড. মঈন খানও শিক্ষিত। চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা বিএনপির শিক্ষিত নেতারা কেন অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন সেটি আমার বোধগম্য নয়।
ড. হাছান বলেন, আসলে যাদের নেত্রী বলেছিলেন সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সমস্ত সিক্রেসি আউট হয়ে যাবে, তাদের কানেক্টিভিটির মর্ম বোঝার কথা নয়। যেমন নেত্রী তেমন তার সভাসদ। সেজন্যই তারা এ সমস্ত আবোল তাবোল কথা বলছেন আর বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। কোনো কোনো পীর সাহেবও দেখছি লাফাচ্ছেন। অথচ গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে লাফাতে দেখি না। বিএনপি আর জামায়াতও এ নিয়ে একটি শব্দ বলেনি।
তিনি বলেন, আমরা ভারতের বুকের ওপর দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। ভুটানের সাথেও আলাপ–আলোচনা চলছে। এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থেই সেই কানেক্টিভিটিকে আমরা আরো বাড়াতে চাই। নেপাল ও ভুটানকেও যুক্ত করতে চাই। কিন্তু বিএনপি সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি চড়াচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব এক এবং অভিন্ন। এদের আলাদা কোনো সত্তা নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার অর্জনের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এর চেয়ে বড় গৌরবের আর কিছুই থাকতে পারে না।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি অধ্যাপক মো মঈনুদ্দিন, মো আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, জসিম উদ্দিন শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম তালুকদার, উপদেষ্টা এড. এম এ নাসের চৌধুরী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আলী শাহ, ইদ্রিস আজগর, নাজিম উদ্দিন তালুকদার, ডা. মো. সলিম, আবু তালেব, আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য ইফতেখার হোসেন বাবুল, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, সরোয়ার হাসান জামিল, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, মো. সেলিম উদ্দিন, গোলাম রব্বানী, মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সাহেদ সরোয়ার শামীম, হাসিবুন সুহাদ চৌধুরী সাকিব, আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, সহযোগী সংগঠনের রিফাত আকতার নিশু, এরাদুল হক ভুট্টো, রওশন আরা রত্না, হারুন অর রশীদ, নাছির উদ্দিন রিয়াজ, তানভীর হোসেন তপু ও রেজাউল করিম।