সামুদ্রিক জলাশয়ে চাষ হচ্ছে ওয়েস্টার, গ্রিন মাসেল ও সি–উইড চাষ। কঙবাজার সদরের খুরুশকুল রাস্তার পাড়া ও মহেশখালী বাঁকখালী নদীর চ্যানেলে নোনা জলাশয়ে এসব চাষ করা হচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র বাঁশের ভেলা, প্লাস্টিক ড্রাম, রশি ও প্লাস্টিকের নেটের খাঁচা। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বর্তমানে সফলতা পেয়েছে উদ্যোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়েস্টার (সাদা বড় ঝিনুক), গ্রিন মাসেল (সবুজ ঝিনুক) ও সি–উইড (সামুদ্রিক শৈবাল) চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বিস্তারের মাধ্যমে উপকূলীয় অগভীর জলাশয় চাষের আওতায় আসবে এবং জলজ সম্পদ উৎপাদন বাড়বে। ফলে কঙবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। একইভাবে গ্রিন মাসেল চাষে আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ অনুসরণ করে রপ্তানিতে নতুন পণ্য যোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
গত ২০২২ সাল থেকে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডশেন এবং আইডিএফ গ্রিন মাসেল উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করে। এতে স্থানীয় দরিদ্র জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং ও চাষি–বান্ধব কলাকৌশল উদ্ভাবন করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে গ্রিন মাসেল চাষে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল শিখানো হয়। একইসঙ্গে গ্রিন মাসেল বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নতুন র্কমসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, বেড়েছে তাদের আয়। এতে সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।
কঙবাজারের নোনা জলাশয়ে সবুজ ঝিনুক চাষি আনোয়ার মিয়া জানান, আমি আইডিএফ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাম, বাঁশ, রশি ইত্যাদি দিয়ে ভেলা তৈরি করে গ্রিন মাসেল ও ওয়েস্টার চাষ করে থাকি এবং এগুলো বিক্রি করে সংসার চালাই। প্রতি মৌসুমে ৭০–৮০ হাজার টাকা আয় হয়। এতে সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।
রিজিয়া বেগম কঙবাজারের খুরুশকুল এলাকার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সুনীল অর্থনীতিতে সফল চাষি। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের পাশাপাশি সবুজ ঝিনুক ও ওয়েস্টার চাষ করে সফলতা পেয়েছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে আসছি। এই কাজ করতে গিয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়েনি। শৈবাল, ওয়েস্টার ও ঝিনুক বিক্রি করে ভাল লাভবান হয়েছি আমি। এখন আমার সংসারে অভাব নেই।
শৈবাল চাষি গিয়াস উদ্দিন জানান, অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। প্রথমে বড় বড় বাঁশ, ড্রাম ও রশিতে পুঁজির দরকার পড়ে। এরপর আইডিএফ’র পরামর্শক্রমে বাঁশের ভেলাগুলো পাহারা দিতে হয়, যাতে নদীতে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার যাতায়াত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নষ্ট না হয় শুধু সেদিকে খেয়াল রাখা। এতে তেমন কোনো সময় অপচয় হয় না। উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রি করতে বাজারে যেতে হয় না, বাসা থেকে কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
আইডিএফ’র মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসান আজাদীকে বলেন, উপকূলীয় এলাকার গ্রামীণ নারী ও যুবকদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সবুজ ঝিনুক, সি–উইড, ওয়েস্টার ইত্যাদি চাষের উপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রদর্শনী প্রদান করা হয়। কারিগরি সহায়তা এবং মার্কেট লিংকেজ করে দেওয়া হয়। এতে করে মাঠ পর্যায়ে ঝিনুক চাষিরা পাচ্ছে ব্যাপক সফলতা। অগভীর নোনা জলাশয়ে ঝিনুক চাষ একে অপরের কাছ থেকে দেখে ঝিনুক চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে হতদরিদ্র মানুষেরা।