নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এক সময় ছিল খেলোয়াড় তৈরির সূতিকাগার। নগরীর খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র ছিল এই আউটার স্টেডিয়াম। কিন্তু কালের বিবর্তনে নানা কারণে এই আউটার স্টেডিয়ামে হয়ে উঠে ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক জঞ্জাল। প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় আগেই আউটার স্টেডিয়াম তার অস্তিত্ব হারায়। ফলে আউটার স্টেডিয়াম যেন পরিণত হয় এক পতিত জমিতে। যেখানে অন্তত আর যাই হোক খেলাধুলা করা সম্ভব নয়।
অবশেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে আবার প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে আউটার স্টেডিয়াম। চার পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এই স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ। যা বর্তমানে বেশ দৃশ্যমান। আউটার স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে এখন যে কারো দৃষ্টি কাড়বেই স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচার মতো মাঠ। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যেন প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে আউটার স্টেডিয়ামকে। এরই মধ্যে মাঠ ভরাট, ঘাস সৃষ্টি, ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়ন সব সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী অক্টোবরের মধ্যে এই মাঠ পুরোপুরি খেলাধুলার উপযোগী হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে মাঠের বর্তমানে যে সাইজ রয়েছে সেটিকে আরো বাড়াতে মাঠের পশ্চিম পাশে ফ্লাড লাইটের যে টাওয়ার রয়েছে সেটি সরানোর কাজও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিজেকেএস অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। তিনি বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের অর্থায়নে এই ফ্লাড লাইটের টাওয়ার সরানোর কাজ করবে। একই সাথে একটি পিলারের মতো টাওয়ারের উপর বাতি গুলো স্থাপন করা হবে। আর সেটা হয়ে গেলে আগামী অক্টোবরেই খেলাধুলা শুরু করতে পারবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। টাওয়ারটি না সরালেও খেলাধুলা করা যাবে। তবে টাওয়ারটি সরালে আরো কিছু জায়গা বাড়বে। যার ফলে মাঠের আকার বাড়ানো যাবে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন এই মাঠে অনেকগুলো খেলাধুলার আয়োজন করা যাবে। বিশেষ করে হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি, খো খো, কিশোর ফুটবল, তৃতীয় ও দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল, বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট, তৃতীয় এবং দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটের মতো নানা ইভেন্ট আয়োজন করা সম্ভব। এই খেলাধুলার জন্য অনেক সময় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠ ব্যবহার করতে হয়। ফলে অন্য বড় ইভেন্ট গুলো ব্যাহত হয়। এছাড়াও এই আউটার স্টেডিয়ামের একপাশে থাকবে বেশ কিছু ক্রিকটে নেট। যেখানে চট্টগ্রামের একাডেমি, বিভিন্ন ক্লাব এবং জেলা ও বিভাগীয় দল অনুশীলন করার সুযোগ পাবে। যেহেতু এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনের মাঠটি মহিলাদের জন্য নির্ধারিত করে সেখানে টার্ফসহ নানা সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাই আউটার স্টেডিয়াম হতে পারে একমাত্র বিকল্প। যেখানে অনেক ইভেন্ট আয়োজন সম্ভব।
যদিও আউটার স্টেডিয়ামের নতুন পরিকল্পনার এখনো অনেক কাজ বাকি। গ্যালারি, ওয়াকওয়ে, সবুজায়নের নিমিত্তে গাছ লাগানোর মতো কাজ এখনো বাকি। তবে খেলাধুলা শুরু হয়ে যাওয়ার পরও এইসব কাজ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের উপর চাপ কমাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আউটার স্টেডিয়াম ব্যবহার শুরু করতে চায় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। অবস্থানগত কারণে আউটার স্টেডিয়াম এমনিতেই দর্শনীয় এক স্থান। দুইপাশে রাস্তা, একপাশে সুইমিং পুল আর অন্য পাশে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। যেখানে হবে গ্যালারি। ফলে আউটার স্টেডিয়ামে খেলা হওয়া মানে বিপুল দর্শকের সমাগম হওয়া। যেমনটি অন্তত দুই দশকেরও আগে দেখা যেতো। সে সময়টা আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আউটার স্টেডিয়ামে আবার খেলাধুলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। যা শুরু হতে পারে আগামী অক্টোবরেই।