যথা সময়ে নিলাম না হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের অকশন শেডে পড়ে থাকা জীর্ণশীর্ণ ১২১ গাড়ির মধ্যে ৭৪টির ধ্বংস কার্যক্রম শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের একটি শিল্পগ্রুপের সহযোগিতায় বিনামূল্যে এসব গাড়ি কেটে স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্তারা। ধ্বংস তালিকার গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে–মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, টয় কার, নিশান জিপ, ডাম্প ট্রাক, ডাবল কেবিন পিকআপ, মিনি পিকআপ ভ্যান, এলপি গ্যাস ভাউচার, এসি বাস, মিনি কাভার্ড ভ্যান, প্রাইমমুভার, সুইপার লরি ও কনক্রিট মিক্সার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০–২৫ বছর আগে আমদানি হওয়া অখালাসকৃত এসব গাড়ি যথা সময়ে নিলামে তোলা হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো। কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের পুরাতন নিলাম গোলায় রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে এসব নষ্ট হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গাড়িগুলো বিক্রি অযোগ্য হওয়ায় ধ্বংসের জন্য সুপারিশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, কাস্টমসের অকশন শেডে কাটার মেশিন দিয়ে পুরনো গাড়িগুলো কাটা হচ্ছে। তারপর সেগুলো স্ক্র্যাপ করে নিলাম বিধি অনুযায়ী নিলামে তোলা হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২ সালের ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। বৈঠকের চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না হওয়া দীর্ঘ দিনের পুরনো পণ্য সরাতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিতে আহ্বায়ক করা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক এবং সদস্য সচিব করা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার উপ–কমিশনারকে। ওই কমিটির সমন্বয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পুরাতন নিলাম গোলায় পড়ে থাকা গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য গত বছরের জানুয়ারির দিকে নতুন নিলাম শাখার আঙ্গিনায় স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা ১২১ গাড়ির বিষয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে। চিঠির জবাবে বিআরটিএ গাড়িগুলো ধ্বংসের জন্য সুপারিশ করে। এরমধ্যে গত বছরের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম শাখা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে অকশন শেডের আঙ্গিনায় মোট ১৮২ টি গাড়ি আছে। এরমধ্যে ৬১টি গাড়ির বিষয়ে মামলা রয়েছে। বাকি ১২১টি গাড়ির ধ্বংসের জন্য আমরা বিআরটিএ থেকে অনাপত্তিপত্র পেয়েছিলাম। তবে এরমধ্যে অধিকতর যাচাই বাছাই করে বর্তমানে ৭৪টি ধ্বংস করা হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গাড়িগুলো কেটে স্ক্র্যাপ হচ্ছে। কাটার পরেও নিলাম বিধিমালা অনুযায়ী স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলাম করা হবে। তবে একটি প্রতিষ্ঠান কাস্টমসে গাড়িগুলো ৮০ লাখ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেয়। তবে আমাদের কাস্টমসের আইন অনুযায়ী নিলাম অযোগ্য পণ্য এভাবে বিক্রির সুযোগ নেই। তাই তাদের সেই আবেদনে সাড়া দেয়ার সুযোগও ছিল না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি আইন মেনে কাজ করতো, তবে আজকে এতগুলো গাড়ি রোদ–বৃষ্টিতে এভাবে নষ্ট হতো না। আইন হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের নিলাম শাখায় আরএল (অখালাসকৃত চালানের তালিকা) প্রেরণ করে। তখন নিলাম শাখা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নোটিশ দেয়। নোটিশের ১৫ দিনের মধ্যেও পণ্য সরবরাহ না নিলে সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিলাম না হওয়ায় কারণে বন্দর ইয়ার্ডে কিংবা কন্টেনারে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।