মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জের ধরে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গেল দুই দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার থেকে আবারও রাখাইন থেকে টেকনাফে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ। ভয়ে ও আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মানুষ। গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে থেমে থেমে ওই শব্দ ভেসে আসছে বলে জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর তুমুল হামলা চালিয়ে শক্ত অবস্থান নেয়। সামরিক বাহিনীও শহরটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে আকাশপথসহ ত্রিমুখী হামলা চালায়। দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এই গৃহযুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের সুদাপাড়া, হাদিবিল, নুরুল্লা পাড়া, হাইর পাড়া, মুন্নী পাড়া, সাইরা পাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদার পাড়া, হাড়ি পাড়া, হেতিল্লা পাড়ার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হয়ে রয়েছে। ফলে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়তে পারে। সেই সাথে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের অনুপ্রবেশের ঘটনাও বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল বুধবার ভোরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি দল অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে সীমান্তরক্ষীরা তাদের প্রতিহত করেছে বলে জানা যায়।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। সীমান্তের লোকজন জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ–পূর্ব এবং সাবরাং এর পূর্বে নাফ নদের ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। মংডু শহরের নাফ নদ দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় রোহিঙ্গাদের জড়ো হতে দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীরা বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা চৌকি উদ্ধারের জন্য এমন গোলাগুলি করছে বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন মনে করছেন।
সাবারাং নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, গত মঙ্গলবার রাত থেকে বজ্রপাতের মত একের এক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিনে মিয়ানমারের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার হামলা হচ্ছে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ এলাকায়। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে সাবরাং এলাকা। একের পর এক বিস্ফোরণে টেকনাফ সীমান্তের বাড়ি–ঘর কেঁপে উঠছে। এখানকার মানুষ ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (৮–এপিবিএন) অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের ফলে সাধারণ রোহিঙ্গারা যারা সেখানে অবস্থান করছিল তারা সেখানে টিকতে না পেরে বিভিন্ন দিকে ছুটছে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাও করছে।
সীমান্তে বিজিবি–কোস্ট গার্ড কাজ করছে উল্লেখ করে অধিনায়ক জাফর বলেন, আমাদের বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা (রোহিঙ্গারা) সেভাবে প্রবেশ করতে পারছে না। তবে আমাদের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে, নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে টেকনাফ–২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ আজাদীকে বলেন, সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মিয়ানমারের গোলার বিকট শব্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে সীমান্তের মানুষ যাতে ভয়ের মধ্যে না থাকে সেজন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সীমান্তে আমাদের বিজিবি–কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।