নগরীর আকবরশাহ এলাকায় দাঁতের চিকিৎসক কুরবান আলী খুন হয়েছেন যে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে, তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখা গেছে আদালত প্রাঙ্গণেও। ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্যাং লিডার গোলাম রসুল নিশানসহ দুইজন গতকাল আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা নিশানসহ দুজনকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় কিশোর গ্যাং সদস্যদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ আচরণ দেখা যায়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের কাজে তথা ছবি, ভিডিও ধারণ করার সময় বাধা, অশালীন ভাষায় গালাগাল, ধাক্কা দেওয়া, এমনকি হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
গতকাল দুপুর ১১ টায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার ৭ ও ৮ নং আসামি যথাক্রমে গোলাম রসুল নিশান ও আরিফুল্লাহ রাজু কোর্ট হিলের নতুন আদালত ভবনের তৃতীয় তলার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। পক্ষ–বিপক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ সদস্যরা নিশান ও রাজুকে একই ভবনের নিচ তলায় থাকা হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন (এখান থেকেই পরে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়)। এ সময় সেখানে হাজির হয় নিশানের ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো অনুযায়ী। এদের বেশিরভাগই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। হুমকির সম্মুখীন হওয়া প্রথম আলোর চিত্র সাংবাদিক সৌরভ দাশ বলেন, উপস্থিত এক কিশোর গ্যাং সদস্য আমাকে বলেন, তুই প্রথম আলোর সাংবাদিক? ছবি কেন তুলছিস, তোকে মেরে ফেলব।
সৌরভ দাশের মতো ইনডিপেনডেন্ট টিভি, যমুনা টিভিসহ আরো বেশ কিছু গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। গোলাম রসুল নিশান ও আরিফুল্লাহ রাজুর আইনজীবী এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন আজাদীকে বলেন, সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি। তবে এমন কিছু হয়ে থাকলে তা ঠিক হয়নি। আদালত জামিন মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করতেই পারে। এতে সম্মান দেখাতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ গ্রহণযোগ্য না।
মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ আজাদীকে বলেন, সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া হলে বিষয়টি অন্যায়। এটা কেন হবে! নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি জানান পর অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়। এরপর পরিস্থিতি কন্ট্রোল হয়। আদালত প্রাঙ্গণে এসব ঠেকাতে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন বলেও জানান মফিজুর রহমান।
আদালতসূত্র জানায়, গোলাম রসুল নিশান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ–সভাপতি। আকবরশাহ এলাকায় (আকবরশাহ’র ফিরোজ শাহ এলাকায় তার বাড়ি) তার বেশ আধিপত্য রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এলাকায় তাকে সবাই রাফ অ্যান্ড টাফ হিসেবে চিনেন।