সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আলোচিত নাম রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ। পদ্মা নদীর চর এলাকা বেষ্টিত জেলাগুলোতে একসময় এই সাপের দেখা মিললেও বর্তমানে পদ্মার বিভিন্ন শাখা নদীর অববাহিকা ধরে ২৬–২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামে অতীতে এই সাপ দেখা যায়নি। তবে ভবিষ্যতে নদী অববাহিকা ধরে সাপটি এই অঞ্চলে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে গত দেড় বছর ধরে রাসেলস ভাইপারের এন্টিভেনম তৈরির জন্য গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম ভেনম রিসার্চ সেন্টারের একদল গবেষক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং চট্টগ্রাম ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ক ও গবেষক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, রাসেলস ভাইপার রাজশাহী অঞ্চলের একটি সাপ। প্রতি বছর এই সাপের দংশনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে অনেকে মারা যান। তবে রোগী মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো দেরিতে হাসপাতালে যাওয়া। এখনো সাপে কাটলে গ্রামের মানুষ অপচিকিৎসা নেয়। বিশেষ করে তারা ওঝা–কবিরাজের কাছে যায়। এরপর যখন হাসপাতালে আসে তখন আর সময় থাকে না।
তিনি বলেন, রাসেলস ভাইপারের বিষ হেমোটঙিক, তাই এই সাপে কাটলে রক্ত জমাট বাঁধে না। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগীর কিডনি, ফুসফুস অকার্যকর হয়ে এক পর্যায়ে মৃত্যু হয়। তাই আমরা বলি, রাসেলস ভাইপার ছাড়াও যেকোনো সাপে কাটলে, যে অংশ আক্রান্ত হবে সেই অংশ নাড়াচাড়া করা যাবে না। শক্ত করে গিট দেওয়া যাবে না। রোগীকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ কিংবা নিকটস্থ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, দেশে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম মজুদ রয়েছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে বলা হচ্ছে, এই সাপ তেড়ে এসে কামড় দেয়। আসলে কোনো সাপই তেড়ে এসে কামড় দেয় না। সাপ আত্মরক্ষার্থে কামড় দেয়। অথচ অনেকে বিভিন্ন ধরনের সাপ দেখা মাত্র লাঠিসোটা দিয়ে মেরে ফেলছে। আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ সাপ কিন্তু নির্বিষ। তবে সাপে কামড় দিলে তো বোঝার উপায় নেই বিষাক্ত নাকি নির্বিষ সাপে কামড় দিয়েছে। সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন ঘাসের ঝোপ ও ঝোপঝাড়ে যেতে হলে প্রথমে ৫–১০ ফুট লাঠি বা বাঁশ দিয়ে নাড়াচাড়া করে তারপর সেখানে যান। পরনে গামবুট ও জিনসের প্যান্ট থাকলে ভালো। ফসলি জমিতে কাজ করা বা ফসল কাটার সময় একই পোশাক পরতে পারেন। রাতে চলাচলের সময় টর্চলাইট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া শোওয়ার ঘরে বস্তায় ফসল রাখবেন না। কারণ সেখানে পোকামাকড়, টিকটিকি ও ইঁদুর ফসল খেতে আসতে পারে এবং এদের খেতে সাপ আসতে পারে। একই কারণে রাতের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশও খোলা রান্নাঘরে বা উঠানে রাখা ঠিক না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাপে কাটা রোগীদের জন্য ভারত থেকে পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনম আনা হয়। এই এন্টিভেনম ভারতের চারটি বিষধর সাপের বিষ থেকে তৈরি। এখন পর্যন্ত এই এন্টিভেনমে রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন। তবে যদি রাসেলস ভাইপারের সাপে কাটা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করে এন্টিভেনম তৈরি করতে পারি, তবে সেটি আরো কার্যকর হবে বলে আমরা আশাবাদী। ইতোমধ্যে আমাদের গবেষণার ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ এই গবেষণার ফলাফল পাব বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, সাপের এন্টিভেনম তৈরির জন্য ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভেনম রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাত্র চারটি সাপ নিয়ে সেন্টারের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমান দেশের সব ধরনের বিষাক্ত সাপ ও বিষ সংরক্ষণে রয়েছে এখানে। বর্তমানে সেন্টারে ১০ প্রজাতির সাড়ে তিন শতাধিক সাপ রয়েছে।