জর্দা টাইকুন এবং হাকিমপুরী জর্দার মালিক কাউছ মিয়া মারা গেছেন। ২৬ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতাদের একজন ছিলেন।
কাউছ মিয়ার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। সোমবার (২৪ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন কাউস মিয়ার নাতি আনোয়ার সাদাত।
মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৮ ছেলে ও ৮ মেয়ে রেখে গেছেন কাউছ মিয়া। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
০২১-২২ করবর্ষে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন কাউস মিয়া। তবে এর আগের কয়েক বছরে তিনি ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন।
কাউস মিয়া ৬১ বছর ধরে কর দিচ্ছেন। কাউছ মিয়া ১৯৫৮ সাল থেকে কর দিয়ে আসছেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষ করদাতা হয়েছিলেন।
২০১৯ সালে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে কাউছ মিয়া বলেছিলেন, ‘আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে “ফ্রি” হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম।’
কাউছ মিয়া ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট চাঁদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষরা তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের অধিবাসী ছিলেন।
১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামায় আর পড়াশোনা এগোয়নি। কিশোর বয়সেই চাঁদপুর শহরে ব্যবসায়ী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন।
তার বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে নামেন। কিন্তু কাউছ মিয়া চাইতেন তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদিদোকান দেন।
এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট হন। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন।
১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে তাঁর মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা। রংপুরে তামাক কিনে সেখানেই বিক্রি করেন। একবার তিনি আমদানির ব্যবসায় নামতে লাইসেন্স নিয়েছিলেন।
মায়ের দেয়া আড়াই হাজার টাকার পুঁজিতে ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সফলভাবে ব্যবসা করে বিপুল নগদ অর্থ-বিত্তের মালিক হন কাউছ মিয়া।