অবহেলিত বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর নিত্যদিনের কষ্টের কারণ কালুরঘাট সেতু। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঢাকা থেকে এ সেতুর উপর দিয়ে কঙবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে, যা শত শত জনগণের চাওয়াকে পূরণ করে চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। দুঃখের হলেও সত্য যে, এই জরাজীর্ণ সেতুটির উপর ওয়াকওয়ে এবং লোড ক্যাপাসিটি না থাকায় বিগত দিনগুলোতে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। বর্তমানে সেতু সংস্কারের নিমিত্তে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় পারাপারের জন্য ফেরী এবং নৌকাই একমাত্র অবলম্বন বলা যায়। বিশেষ করে চাকরিজীবীদের জন্য ফেরী বন্ধ থাকলে বা শুধুমাত্র একটি ফেরী চালু থাকলে নৌকার উপর ভরসা করেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। সেতুর চলমান কাজ কবে শেষ হবে তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। সেতু সংস্কারের ধীরগতির কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ২৯ এপ্রিল ২০২৪ এক কলেজ ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ২২ জুন আবার ফেরীর সাথে নৌকার ধাক্কাতে ২জন আরোহী নদীতে পড়ে তলিয়ে যায়। তন্মধ্যে একজন পল্লী বিদ্যুতের প্রকৌশলী। ২৩ জুন, তার লাশ উদ্ধার করা হয়। আমার ৩০ বছরের চাকরি জীবনে চেনা পরিচিত অনেককেই প্রাণ হারাতে দেখেছি। ফেরী বা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে তাদের জীবনাবসান হয়। এমপি মঈনুদ্দিন খান বাদল সংসদে কালুরঘাট নুতন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব রেখে মনে ক্ষোভ নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন। বোয়ালখালির ভোটারদের প্রধান ইস্যু মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুর সংস্কার নয়, নতুন সেতু নির্মাণ করা। বারবার শুধু নতুন সেতুর নঙা, ডাবল লেন ও ডুয়েল গেজ রেল লাইন, ডাবল লাইন সড়ক থাকার আশার বাণী শুনে যাচ্ছি। এক আতঙ্কের মধ্যে জীবন হাতে নিয়ে নদী পারাপার করছে বোয়ালখালিবাসী। সরকারের নজরে আছে কিনা জানি না– এ অঞ্চলে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের অবস্থান। এ কলেজের ৫০% শিক্ষার্থী এবং আরও তিনটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা নদীর ওপারের শহর থেকে কলেজে যাতায়াত করে। পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সময়মত কলেজে পৌঁছানো– মাথাব্যথা হয়ে ওঠে। তাছাড়া যানবাহনের ভোগান্তি তো আছেই। এ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য কোনও বাস বা মিনিবাসের ব্যবস্থা নেই। ২০১৪ থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্র্যন্ত অনেকবার সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা যায় ২০২৮ থেকে ২০৩১ এর ভিতর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৪শে জানুয়ারি ২০২৪, রেলমন্ত্রী নতুন সেতু নির্মাণে ৪–৫বছর লাগবে বলে সাংবাদিকদের বলেন। কাজ যতই দ্রুত হবে ততই মঙ্গল। আর কত প্রাণ গেলে সরকারের টনক নড়বে! কোটি টাকা খরচ করে মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু সংস্কার করা অপচয় মাত্র –যা ভাঙা পায়ে নূপুর পড়ানোর মতই। মাননীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও কৃপা প্রার্থনা করছি।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বোয়ালখালি নুরুল হক ডিগ্রী কলেজ।