আসছে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের সম্ভাবনার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গতকাল সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের পর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সম্ভাবনা বেশি। প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগে চীনের ক্ষমতাসীন দলের এ নেতার ঢাকা সফরকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান। খবর বিডিনিউজের।
প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে পৃথকভাবে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তারা। বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনায় চীনের অর্থায়নের বিষয়টি এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত সরকার। বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, তিস্তা নিয়ে আজকে আলোচনা হয় নাই। আমার সাথে সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীনে সম্ভাব্য প্রথম এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, যা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান তারা। তবে কী কী বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতার জন্য কাজ চলছে, সেসব নিয়ে কোনো তথ্য দেননি তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামনে প্রধানমন্ত্রী যে সফরে যাচ্ছেন, তাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে, সেটি আমরা প্রত্যাশা করেছি। সেই সফরের আগে তার (লিউ জিয়ানচাও) আগমনটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা এ সফরের দিকে তাকিয়ে আছি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মন্ত্রী লিউ বলেন, অবকাঠামো, কৃষি, বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাণিজ্য খাতে আরও কাজ করতে পারে চীন–বাংলাদেশ। সরকারের ‘ভিশন ২০৪১’ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে পাশে থাকার বিষয়ে আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন চীনের এ নেতা। আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী আসন্ন সফর বেশ ফলপ্রসূ হবে। আপনাদের আধুনিকায়নের যাত্রায় প্রতিবেশী ও অংশীদার হিসেবে সারথির মত রয়েছে চীন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সম্ভাব্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক দলিল সই হবে বলে আমি নিশ্চিত।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চুক্তি–সমঝোতা স্মারক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। সেটা নিয়ে পরে বলব। এই ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা অব্যাহত রাখবে চীন।
দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন লিউ জিয়ানচাও। ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, আমরা গাজা ইস্যু আলোচনা করেছি। গাজায় যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীতে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর ফলে চীনের আরও সক্রিয় ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করি, সেটি তাকে জানিয়েছি। যে কোনো উপায়ে ব্রিকস এর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা তৈরির বিষয়ে বৈঠকে চীনের সহায়তা কামনার কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ব্রিকস এর যে কোনো ফরম্যাটে যাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয়, সেটি সদস্য দেশ বা অংশীদার দেশ, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্তে যাই হোক না কেন– এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের সমর্থন–সহায়তা কামনা করেছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা চায় ঢাকা, আশ্বাস চীনের: এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বৈঠকে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন লিউ জিয়ানচাও।
হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মিয়ানমারকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চীনকে বলেছি আমরা, যাতে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনটা শুরু করে। তিনি বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং তাদের ক্যাপাসিটিতে যতটুকু করা সম্ভব, সে অনুযায়ী সহায়তা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে লিউ জিয়ানচাও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের মানবিকতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা জানি, এটা কতটা কঠিন বিষয়, কতটা জটিল। এটা এখন কতটা কঠিন এবং ভবিষ্যতে কতটা জটিল হবে।
চীনকে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য ও সিরামিক আমদানির আহ্বান: বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে চীনকে ওষুধ, সিরামিক ও চামড়াজাত পণ্য আমদানির আহ্বান করার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান। তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে আলাপ করেছি। আমরা চীনে রপ্তানি করি ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি করি ১৩ বিলিয়ন ডলার। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেছি। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আমি বলেছি, তোমাদের দেশে আমাদের ওষুধ নিয়ে যাও। আমাদের চামড়া খাত অনেক ভালো করছে। আমাদের সিরামিক ইউরোপে যাচ্ছে, আমেরিকায় যাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।