চট্টগ্রাম কাস্টমসে ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) শাখার কার্যক্রম। এডিআর শাখার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কাস্টমসে রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা জট কমছে না। শুধুমাত্র আইনের মারপ্যাঁচে আটকে আছে সরকারের শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। বর্তমানে আপিল ট্রাইব্যুনাল, আপিল কমিশনারেট এবং উচ্চ আদালতে রাজস্ব সংক্রান্তসহ বিভিন্ন মামলা আছে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি। এডিআর শাখার কর্মকর্তারা জানান, এডিআর কার্যক্রম চালু রাখতে হলে কাস্টমস ও আমদানিকারক উভয় পক্ষকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল এডিআর কার্যক্রম গতি পাবে। এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলে কাস্টমস ও আমদানিকারক উভয় পক্ষ লাভবান হবে। উচ্চ আদালত ও কাস্টমসের আপিল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন থেকে নিষ্পন্ন না হওয়া অবস্থায় রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয় এনবিআর। সেই লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যক্রমটি শুরু হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহযোগিতায় ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে এডিআর পদ্ধতিটি গতি পায়। এ পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে আমদানিকারক এবং কাস্টমসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একজন নিরপেক্ষ সহায়তাকারীর মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস শাখা সূত্রে জানা গেছে, এডিআর শাখা মূলত কাস্টমসের শুল্ক মূল্য সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা কাস্টমস ও আমদানিকারকদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে। এক্ষেত্রে আমদানিকারককে কাস্টমসের ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলা নামিয়ে এডিআরে আনতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় কাস্টমসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না।
জানা গেছে, এডিআর শাখায় গত ৫ বছরে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র একটি। সেটি শুল্ক মূল্য সংক্রান্ত না হওয়ায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৬–২০১৭ অর্থবছরে এডিআরে মামলা নিষ্পত্তির জন্য আবেদন জমা পড়ে ১০২টি। বিপরীতে নিষ্পত্তি হয় ৯১টি। এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৭–২০১৮ অর্থবছরে এডিআরের কোনো কার্যক্রম ছিল না। সর্বশেষ ২০১৮–২০১৯ অর্থবছরে এডিআরে আবেদন জমা পড়ে ২৪টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ২১টি। এসব মামলা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কাস্টমসে আবেদন জমা পড়েছে ১২৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ১১২টি মামলা। নিষ্পত্তিকৃত মামলা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এছাড়া বাকি ১৪টি নিষ্পত্তি হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান বলেন, এডিআর কার্যক্রম চালু রাখার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছি। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আমদানিকারকরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এডিআরে মামলা নিষ্পত্তি হলে মামলা জট কমে যেত বলে মনে করেন তিনি।