কর্ণফুলী নদীতে ফেরির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নৌকা উল্টে নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কালুরঘাট সেতু এলাকায় নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর দেড় কিলোমিটার দূরে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। আশরাফ উদ্দিন কাজল (৫৩) নামের ওই ব্যক্তি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বোয়ালখালী উপজেলার পরিচালক। তার বাড়ি বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদণ্ডী গ্রামে।
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বাহার উদ্দিন বলেন, রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে স্থানীয় লোকজন লাশ দেখতে পেয়ে খবর দেন। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে পুলিশকে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম পাড় (শহর অংশ) থেকে বোয়ালখালী যাওয়ার পথে যাত্রীবোঝাই একটি নৌকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরির সঙ্গে ধাক্কা খায়। তখন আশরাফ উদ্দিনসহ দুজন পানিতে পড়ে যান। আরেকজন উঠে আসতে পারলেও নিখোঁজ হন আশরাফ। তাকে খুঁজতে শনিবার রাত পর্যন্ত ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালায়। এরপর গতকাল সকালেও তল্লাশি চালানো হয়। বিকালে নৌবাহিনীর ডুবুরি দলও নামে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা বাহার উদ্দিন। ফেরির সঙ্গে নৌকার ধাক্কা লাগার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। সেখানে দেখা যায়, যাত্রীবাহী নৌকার সামনের অংশে চারজন যাত্রী দাঁড়িয়েছিলেন। নৌকার ইঞ্জিন চালু করার পরই দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিতে গিয়ে ধাক্কা খায় নৌকাটি। এ সময় সামনে থাকা দুজন পানিতে পড়ে যান।
নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, নৌকাটির যাত্রীর আসনে যাত্রীরা বসেছিলেন। কিন্তু কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাদের ধারণা, শ্যালো ইঞ্জিন চালুর পর পেছনে পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু সামনের অংশে যাত্রী থাকায় ইঞ্জিনের পেছনে পানি পাওয়া যায়নি। ওই সময় স্রোত থাকায় নৌকাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরিতে গিয়ে ধাক্কা দেয়।
মায়ের মৃত্যুর ৪২ দিনের মাথায় ছেলের মৃত্যু : বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, মায়ের মৃত্যুর ৪২ দিনের মাথায় ছেলে আশরাফ উদ্দিন কাজলের মৃত্যু হয়েছে। কাজলের স্ত্রী দিল আফরোজা পারভীন রীতা গোমদণ্ডী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি জানান, পটিয়া পল্লী বিদ্যুতের একটি বোর্ড মিটিং শেষে শহরে যান আশরাফ উদ্দিন কাজল। শহর থেকে ছেলেমেয়ের জন্য বার্গার আর কিছু নাস্তা নিয়ে আসছিলেন। আসার পথে তাড়াহুড়া করে কালুরঘাট ফেরিঘাটের পশ্চিম দিক থেকে নৌকায় উঠেন। জায়গা না পেয়ে নৌকার সামনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনিসহ কয়েকজন। এ সময় ফেরিঘাটে একটি ফেরি অবস্থান করছিল। ইঞ্জিনবাহী নৌকাটি চালু করার পর ফেরিতে গিয়ে ধাক্কা দিলে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কাজলসহ দুজন কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যান। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক নূর কাদের নামের একজনকে উদ্ধার করা গেলেও কাজল নদীর পানিতে তলিয়ে যান।
নিহত কাজল বোয়ালখালী পৌরসভার পূর্ব গোমদণ্ডী ৩ নম্বর ওয়ার্ড মরহুম মেজর হাবিবুর রহমানের ছেলে। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। গতকাল রাত ১০টায় নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, বোয়ালখালী উপজেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের সংযোগ তৈরি করা কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটি সংস্কারের জন্য গত বছরের ১ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে। ওই সময় থেকে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে কর্ণফুলীতে ফেরি চালু হয়।