আমরা পত্র–পত্রিকাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে বর্তমান সমাজে জ্ঞানীজনদের অপমানের চিত্র প্রতিনিয়ত কিছুটা হলেও উপলব্ধি করছি। দেশের অমূল্য সম্পদ এমন জ্ঞানী ব্যক্তিত্বগণ বর্তমানে খুব কম জায়গায়ই তাঁদের ন্যায্য পাওনা তথা সম্মান বা কদর পেয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা চরমভাবে লাঞ্চিত–বঞ্চিত–অবহেলিত হচ্ছেন। কয়েক বছর আগেও আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্রীড়া পতাকাবাহী সংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক তাঁদের নিজস্ব বা জাতীয় কর্মকাণ্ড হিসেবে গৃহীত প্রায় কর্মসূচীসমূহে এলাকার জ্ঞানী ব্যক্তিত্বদের সম্মানিত অতিথির আসনে অলঙ্কৃত করা হতো। ফলে তাঁদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হতে শিক্ষণীয় উপদেশাবলী প্রচার তথা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশ–বিদেশে পৌঁছে যেত। এসব গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করার ফলে সমাজ তথা দেশের জনগণ অপরিসীম উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ থাকতো কলুষমুক্ত। কাজেই সমাজ আলোকিত হওয়ায় সাধারণ জনগণ সমাজে শান্তিতে বসবাস করতো।
মোটা অংকের ডোনেশনের লোভে বা এলাকায় প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্যে বর্তমানে উল্লিখিত অধিকাংশ অনুষ্ঠানে সমাজের অর্থশালী বা প্রভাবশালীকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। তবে বিভিন্ন প্রভাব বা চাপের কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞজনদের আমন্ত্রণ জানানো হতে বঞ্চিত হওয়ার নিরব অভিযোগও আমরা শুনে থাকি। এরা সচ্চরিত্র গঠন, সমাজ বা দেশের কল্যাণে দিক–নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিতে অযোগ্য হওয়ায় সমাজে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা এতোই অযোগ্য হয়ে থাকে যে, শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে “১০০ নম্বরের পরীক্ষায় শুধু জিপিএ ফাইভ পেলে চলবে না, জিপিএ ১০০ বা তার কাছাকাছি নম্বর পেতে হবে” অথবা ফুটবল টুর্নামেন্টে “এতোজন খেলোয়াড় শুধু ১টি বলের পিছনে দৌঁড়াবে কেন, আমাকে যখন অতিথি করা হয়েছে তখন অর্থের জন্য কোন চিন্তা নেই, আমি প্রতিজনকে ১টি করে বল দেয়ার ঘোষণা করছি” এমন হাস্যকর বক্তব্য দিতেও শোনা যায়। এর ফলে প্রকৃত জ্ঞানীজনেরা পরোক্ষভাবে অপমানিত হচ্ছেন। তবে এসব প্রভাবশালীদের ডিঙ্গিয়ে মাঝে মধ্যে জ্ঞানীজনদের অনুষ্ঠানে অতিথি করার ফলে ষড়যন্ত্রকারীগণ কর্তৃক অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার দৃশ্যও আমাদের নিরবে সহ্য করতে হয়। একথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে, প্রকৃত সুশিক্ষার অভাবেই আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম বৃদ্ধির পাশাপাশি পিতা–মাতা তথা সমাজের অভিভাবক শ্রেণীর অনেকেই বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে অর্থ বা প্রতিপত্তির কারণে সন্তানের হাতে হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য ঘৃণিত কর্মও আমাদেরকে মাঝে মধ্যে বিচলিত করছে। আমাদের সমাজের প্রকৃত জ্ঞানী–গুণীজন তাঁদের প্রাপ্য কদর তথা সম্মান পাচ্ছেন না বিধায় আমরা প্রতিনিয়ত তাঁদের থেকে সুশিক্ষা অর্জন হতে বঞ্চিত হচ্ছি মর্মে প্রতীয়মান হয়।
লেখক : সিএ টু সিইও, জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম।