মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জেরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের ২৭ গ্রাম। দিনরাত এই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের দক্ষিণ–পশ্চিমের গ্রামগুলোতে দেখা মিলছে আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলীও। সব মিলিয়ে চরম অস্বস্তিকর জীবন অতিবাহিত করছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। টেকনাফ সীমান্ত এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে, গত ১৮ জুন সকালে ওপার থেকে মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে। যা ২২ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে অব্যাহত রয়েছে। এতে টেকনাফ উপজেলার পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, পল্লানপাড়া, অলিয়াবাদ, কুলালপাড়া, খাংকার ডেইল, টেকনাফ সদরের ডেইলপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, সাবরাং পানছড়িপাড়া, সিকদারপাড়া, মগপাড়া, আচারবনিয়া, ঝিনাপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া, উত্তরপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়াসহ অন্তত ২৭ গ্রামের ঘরবাড়ি কাঁপছে।
সাবরাং এলাকার সাবেক জনপ্রতিনিধি শফিক মিয়া ও স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মদ শরিফ বলেন, ‘গেল শুক্রবার মাঝরাত থেকে শনিবার সারাদিন তিনি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে সীমান্তে এমন বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। ঘটনাগুলো মিয়ানমারের হলেও বিস্ফোরণের শব্দে কাপঁছে এপার। তাই এলাকার মানুষ ভালোভাবে ঘুমাতে পারছে না। দিনে খানিক স্বাভাবিক হলেও রাতের বেলায় বিকট শব্দে আতঙ্কে থাকে মানুষজন।’ সীমান্তে বসবাস করা লোকজন জানান, টেকনাফের নাফ নদের পূর্ব পাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কাদিরবিল, মংনিপাড়া ও সুদাপাড়া গ্রাম। ওই সব এলাকায় মানুষের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘরবাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আগুন দেওয়া বাড়িঘরের অধিকাংশের মালিক রোহিঙ্গা নাগরিকরা। রোহিঙ্গাদের উল্লেখযোগ্য অংশ নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর রয়েছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। পাশাপাশি রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘এটি মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হলেও এপারের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারছে না।’ তিনি বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান।