চট্টগ্রামে ঈদের ছুটিতে এবারও সবচেয়ে বেশী লোক সমাগম ঘটেছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। ঈদের ছটিতে কেউ মেতে ওঠেন সমুদ্রস্নানে, অনেকে চড়েন স্পিডবোটে, কেউ কেউ ঘোড়ার পিঠে।
অন্যদিকে স্বাধীনতা পার্ক ও জাম্বুরি পার্কে আগের সেই জৌলুশ ছিলনা। জায়গাও ছোট। বিপরীতে পতেঙ্গায় খোলা জায়গার অভাব নেই। চাইলেই এক পাশে নিজের মতো করে বসে থাকা যায়। আড্ডা দেওয়া যায়। এ কারণে সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি আর অবারিত হাওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডায় মজে যেতে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। সৈকতপাড়ের দোকানগুলোতে বিক্রি ছিল জমজমাট। কেউ কিনছেন, চুড়ি ফিতা, কেউ কিনে দিচ্ছেন। কেউ চোখ মুখ লাল করে চটপটি খাচ্ছেন, আবার কেউ তা দেখেই সুখ খুঁজছেন। বেশির ভাগ মানুষই সমুদ্রের সঙ্গে মিতালি পাতার দৃশ্য ফ্রেমে বন্দী করেছেন ক্যামেরা আর মুঠোফোনে। যাদের সেই সুযোগ ছিল না তাদের জন্য ছিল বিকল্প ব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীরা দারুণ ব্যস্ত ছিলেন পর্যটকদের ফরমায়েশ অনুযায়ী ছবি তোলা ও ১০ মিনিটের মধ্যে সরবরাহের কাজে। মূল সৈকত ছাড়াও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট ছিল নেভাল একডেমি সংলগ্ন কর্ণফুলীর মোহনা। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাড়ির বহর আর বাধের উপর বসে আড্ডায় মেতেছেন সবাই।
নগরীর লালখান বাজার এলাকা থেকে মাহফুজুর রহমান তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের পরদিন বেড়াতে এসেছিলেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্র সৈকতে আসার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি আজাদীকে বলেন, পরিবারের সবাইকে একসাথে পাওয়া যায় না। ঈদ উপলক্ষে সবাই এসেছেন বাসায়। এই সুযোগে আজ সবাই মিলে সৈকতে ঘুরতে এলাম। জামাল খান এলাকা থেকে সৈকতে বেড়াতে এসেছেন মণিহার, মেহবুবা ও রিমঝিম। সৈকতে এলেই নাকি তাদের মনটা ভাল হয়ে যায়। সমুদ্র সৈকত ও নেভালে ঘুরে না বেড়ালে ঈদের আনন্দ তাদের অপূর্ণ থেকে যায়।
অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই, বসের হুকুম তামিলের বাধ্যবাধকতা নেই, যানজটের যন্ত্রণা নেই, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা নুন আনতে পান্তা ফুরনোর ভয় নেই – এমন কয়েকটি দিন কাটাতে যেকোন উৎসবেই বিনোদন প্রিয় মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকে ফয়’স লেকস্থ কনকর্ড এ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সি ওয়ার্ল্ডে। এবারো তাই এ বিনোদন স্পটটি সেজেছিল বর্ণীল আলোকসজ্জায়। অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁইয়ে নীলাকাশ যেন নুইয়ে পড়ে এখানে। লেকের স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিরে স্পিডবোটে দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই কনকর্ড সী ওয়ার্ল্ডের দেখা মিলবে। এ যেন সম্পূর্ণ আলাদা এক জগত। কর্মকর্তারা জানান, ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে লোকজনই বেশি ফয়সলেকে আসেন। বেজক্যাম্পের ‘ট্রি টপ অ্যাক্টিভিটি’, ‘অন গ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি, ‘টিম বিল্ডিং গেম’, ‘কায়াকিং’সহ রোমাঞ্চকর আয়োজন উপভোগ করেছেন। কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ঈদে অনেক দর্শনার্থী সময় কাটাতে আসেন ফয়স লেক ও ওয়াটার পার্ক সি–ওয়ার্ল্ডে। তবে গতবারের তুলনায় এবার মানুষ কিছুটা কম। ঈদ উপলক্ষে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে, রয়েছে প্যাকেজও।
পাশাপাশি ফয়ে’স লেক চিড়িয়াখানাও উৎসব প্রিয় মানুষের পদচারনা থেকে বাদ পড়েনি। চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানাটিতে না আসলে ঈদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায় অনেকের কাছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন বলেন, শিশু–কিশোররা প্রাণী দেখার আনন্দে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে বাঘ, হরিণ, ময়ূর, বানর ও জেব্রার খাঁচার সামনে পা ফেলার জায়গা ছিল না।
এছাড়াও পতেঙ্গা প্রজাপতি পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক, হালিশহর সাগর পাড়, ডিসি পার্ক, ভাটিয়ারি হ্রদ, সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সাগরপাড়, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমেছিল দর্শনার্থীদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত বন্দরনগরীর অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটন স্পট ‘ওয়ার সিমেট্রি’তে ঘুরতে দেখা গেছে অনেককে। কেউ এসেছিলেন সবান্ধব, কেউ সপরিবারে।