দুইদিনে প্রায় ১০ হাজার টন কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর মধ্যে প্রথমদিন (গত সোমবার) ৬ হাজার ২০০ টন এবং পরদিন দিন মঙ্গলবার বাকি বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হয়। প্রথমদিন বিকেল ৫টার মধ্যেই প্রধান সড়কসহ অলিগলি থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এদিন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দিনভর এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে ছুটে চলে মনিটরিং করেন বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, কোরবানিদাতাদের মাঝে ৯০ হাজার পলিথিনের ব্যাগ বিতরণ করা হয়। এসব ব্যাগে জবাইকৃত পশুর নাড়িভুড়িসহ অন্যান্য উচ্ছিষ্ট রেখে দেন কোরবানিদাতারা। যা চসিকের সেবকরা এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এছড়া দুর্গন্ধ রোধে ছিটানো হয় ব্লিচিং পাউডার। নগরের ৪১ ওয়ার্ডকে ৬ জোনে ভাগ করে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে কাজ করেন ৪ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী। বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৩৭৪টি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। কোরবানির দিন সোমবার বিকেলে নগরের আলমাস সিনেমা হল এলাকায় সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, সাড়ে তিনটার মধ্যেই ৮০ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী আজাদীকে বলেন, কোরবানির দিন পৌনে ৫টার মধ্যে পুরো শহর পরিষ্কার হয়ে যায়। কোথাও ময়লা ছিল না। সবার সহযোগিতায় আমরা সফল হয়েছি। তিনি বলেন, প্রথম দিন ৬ হাজার ২০০ টন কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ করেছি। দুই হাজার ২শ ট্রিপ ময়লা আমাদের আবর্জনাগারে নেয়া হয়েছে। ৩৭৪টি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে বর্জ্য অপসারণে। প্রচুর ইক্যুপমেন্ট ছিল আমাদের। তাই কোনো সমস্যা হয়নি। এদিকে কোরবানির দিন চসিকের জনসংযোগ শাখার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লক্ষ্যমাত্রার আধঘণ্টা আগেই বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে চসিক। বিকেল ৫টার মধ্যে নগরীকে কোরবানির বর্জ্যমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরের প্রায় সমস্ত কোরবানির বর্জ্য পরিচ্ছন্ন করতে সক্ষম হয়েছে চসিক। মেয়র চসিকের একটি টিমকে সাথে নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে কোরবানির বর্জ্যমুক্ত অবস্থায় পেয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রথম ধাপের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন ঘোষণা করেন। তবে চট্টগ্রামে অনেকে দুপুরের পর এবং সন্ধ্যায় কোরবানি করে থাকেন। এসব বর্জ্যও রাত ৮টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার কোরবানি বর্জ্য অপসারণ কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন মেয়র। এসময় তিনি বলেন, ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে একটানা বর্জ্য অপসারণ করে সেবকরা চট্টগ্রাম শহর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে তুলে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণের নেতৃত্বে বর্জ্য অপসারণ সংক্রান্ত এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। কোথাও বর্জ্য পেলেই তারা তা তাৎক্ষণিক অপসারণ করে এবং বর্জ্য অপসারণের পর প্রতিটি ডাস্টবিন ও বর্জ্য রাখার স্থানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জবাইকৃত পশুর রক্ত ধুয়ে ফেলে। ফলে পুরো শহরের পরিবেশ সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরগণ বর্জ্য অপসারণ কাজ তদারকি করেন।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দামপাড়া অফিসে একটি সার্বক্ষণিক কন্ট্রোলরুম খোলা হয়। সেখানে যে কোনো অভিযোগ পাওয়ামাত্র তা দ্রুত ওয়াকিটকি বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর বা সুপারভাইজারকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানানো হয়। কোরবানি পশুর বর্জ্য ও নাড়িভুড়ি দ্রুত অপসারণ করে নগরের পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠক ও ব্যক্তিমহল সিটি কর্পোরেশনকে অভিনন্দন জানায়।
সভায় চসিকের কর্মকর্তারা বলেন, পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সঠিক তদারকির মাধ্যমে এবারও কোরবানির জবাইকৃত পশুর বর্জ্য ঈদুল আজহার দিন বিকেল ৫টার মধ্যে পুরো শহর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চসিক।
নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীর পরিচালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।