প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই কক্সবাজারে শুরু হয় পাহাড় ধস, আর এতে চাপা পড়ে প্রাণ হারান বহু মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় বর্ষা শুরু হতে না হতেই কক্সবাজারে গত তিন দিনে পাহাড় ধসে মারা গেলেন অন্তত ১২ জন। এরমধ্যে গতকাল শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারান ঘুমন্ত স্বামী–স্ত্রী। তারা হলেন, স্থানীয় ওমর ফারুক জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আনোয়ার হোসেন (২৬) ও তার স্ত্রী মাইমুনা আক্তার (২০)। মাইমুনা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানান স্বজনেরা। তার দুই দিন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাঁচ স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৮ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন বাংলাদেশি।
কক্সবাজার পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আর শুক্রবার ভোর রাত ৩টার দিকে হয় ভারী বৃষ্টিপাত। এসময় শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পাহাড়ের এক খণ্ড মাটি এসে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা মো. আনোয়ার হোসেনের ঘরের উপর পড়ে। এতে স্বামী–স্ত্রী দুইজনই মাটির নিচে চাপা পড়ে। ঘটনার পর আনোয়ার হোসেনের মায়ের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে মাটি সরিয়ে দুইজনকে উদ্ধার করে। পরে তাদের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে ৮ জন রোহিঙ্গা ও দুই জন বাংলাদেশি। মঙ্গলবার (১৮ জুন) মধ্যরাত থেকে বুধবার (১৯ জুন) সকাল পর্যন্ত উখিয়ার ১, ৮, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এই ঘটনা ঘটে। বুধবার সকাল ৬টায় ১০ নম্বর ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে চার জনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টায় ৯ নম্বর ক্যাম্পের এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ওখানে উদ্ধার করা হয় দুই জনের মরদেহ। ভোর ৪টার দিকে ৮ ও ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয় তিন জনের। তখনই ১ নম্বর ক্যাম্পে আরেকজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, উখিয়ার বালুখালীর ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পুতনী বেগম. মো. আনোয়ারের ছেলে মো. হারেছ (৫), ৯ নম্বর ক্যাম্পের আলী জহুরের ছেলে মো. হোসেন আহম্মেদ (৫০), একই ক্যাম্পের আলী জোহারের মেয়ে আনোয়ারা বেগম (১৮), জামালের ছেলে মো. সালমান (৩), ১০ নম্বর বালুখালী ক্যাম্পের আবুল কালাম (৫৭), মতিউর রহমানের মেয়ে সলিমা খাতুন (৪২), আবুল কালামের ছেলে আবু মেহের (২৪) ও শরিফ হোসেনের মেয়ে জানু বিবি (১৯) এবং থাইংখালী ১৪ নম্বর ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা শাহা আলমের ছেলে আব্দুল করিম (১২) ও মো. হোসন আহমদ (৩৪)।
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর জানান, মঙ্গলবার থেকে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার ভোরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীর কয়েকটি ক্যাম্পে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি ঘর মাটি চাপা পড়ে যায়।
গত বছরও পাহাড় ধসে কক্সবাজার শহরে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত বছর ১৫ আগস্ট পাহাড় ধসে শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের পাহাড়তলী ইসলামপুর এলাকায় মোহাম্মদ আজম (৬৭) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন। এর আগে ৭ ও ৮ আগস্ট উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মা ও মেয়ে এবং চকরিয়ার বরইতলীতে দুজন মারা যান।
মূলত পাহাড় কেটে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণেই এমন অনাকাক্সিখত পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।