যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদুল আজহা গত সোমবার উদযাপিত হয়েছে। ত্যাগের মহিমাকে ধারণ করে এদিন চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সামার্থ্যবান মুসলমানরা পরম করুণাময়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি দেন। একইসঙ্গে কোরবানিদাতারা দরিদ্র ও কোরবানি করতে অক্ষম লোকদের মাঝে জবাইকৃত পশুর মাংস বিলি করে সৃষ্টি করেন সমতা ও ভ্রাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত। এর মধ্য দিয়ে পরস্পর ভাগ করে নেন ঈদ আনন্দ। এর আগে সকালে ধনী–গরীব সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে জামাতের মাধ্যমে আদায় করেন ঈদুল আজহার নামাজ। নামাজ শেষে ঈদগাহ ও মসজিদে মসজিদে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য দোয়া করা হয়।
সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রামের প্রধান ঈদ জামাত হয় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। ইমামতি করেন মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। একই প্রাঙ্গণে ঈদের দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে। এতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মোহাম্মদ আহমদুল হক।
জমিয়তুল ফালাহ–এ ঈদ জামাতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন,
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনরা অংশ নেন। তারা নগরবাসীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
নামাজ শেষে সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী নওফেল বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি আমাদের স্থিতিশীলতা নিরাপত্তা এবং শান্তির প্রতীক, তার জন্য আমরা দোয়া করেছি। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুন, নিরাপদে রাখুন। বাংলাদেশকে নিরাপদে রাখুক আল্লাহ। আর আজকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যে চ্যালেঞ্জ, সেগুলো যাতে আমরা মোকাবেলা করে সাধারণ মানুষের যে অধিকারের কথা ইশতেহারে বলেছি, সেগুলো যেন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেজন্য দোয়া করেছি।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, সবার শান্তি হোক। দুর্ভিক্ষমুক্ত বাংলাদেশ হোক। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে সরকার ও নেতাদের দুর্নীতিমক্ত হতে হবে।
এদিকে নগরের বহদ্দারহাট শাহী জামে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আত্মত্যাগের মাধ্যমে ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার যে শিক্ষা ঈদ আমাদের দেয় তা সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোরাবানির আত্মত্যাগের মাধ্যমে দরিদ্র শ্রেণির কষ্ট উপলব্ধি করার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, সে শিক্ষাকে ধারণ করে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে লড়তে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। জমিয়তুল ফালাহ ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৯টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদগুলো হল লালদিঘী সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)। এছাড়া নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত স্ব স্ব মসজিদ বা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হয় এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে। এতে ইমামতি করেন বায়তুশ শরফ আদর্শ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাইয়েদ আবু নোমান। এখানেও ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তি কামনায় দোয়া করা হয়। কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঞা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মালেক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসানসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ জামাতে ঈদের নামাজ পড়েন।