আচার্য স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (১৮৬১–১৯৪৪)। যিনি পি সি রায় নামেও পরিচিত। প্রখ্যাত রসায়নবিদ, শিক্ষক, দার্শনিক ও কবি। তিনি বৈজ্ঞানিক জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী ছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২রা আগস্ট খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলা রাড়ুলি–কাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভুবনমোহিনী দেবী ও জমিদার হরিশচন্দ্র রায়ের পুত্র। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র কলকাতার অ্যালবার্ট স্কুল থেকে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে এফ এ পরীক্ষায় পাস করেন। প্রেসিডেন্সী থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি এসসি পাস করেন। পরবর্তীকালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়েই ডিএসসি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার সেই গবেষণার বিষয় ছিল ‘কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণির সম্মিলিত সালফেটের সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ’। দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং পিএইচডি ও ডিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এমনকি তার এই গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় তাকে হোপ প্রাইজে ভূষিত করা হয়। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ২৪ বছর তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা দান করেন। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে, ৭০০ টাকা বিনিয়োগে ও নিজ উদ্যোগে, নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীকালে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। খুলনা টেক্সটাইল মিলও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কারি (ও) নাইট্রেট (মারকিউরাস নাইট্রাইট) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়। এছাড়া ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট পান। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ সরকারের থেকে নাইট উপাধি লাভ করেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।