চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চীন সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ভবনের নকশায় কিছু পরিবর্তনপূর্বক চূড়ান্ত অনুমোদন চুক্তি করা হয় বলে জানা গেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও নেভির মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, চমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, চমেক হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এছাড়া চীন সরকারের পক্ষে ৩ সদস্য বিশিষ্ট চীনের একটি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, বার্ন ইউনিট প্রকল্পের নকশার চূড়ান্ত অনুমোদনের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। এছাড়া আগস্টের শেষ সপ্তাহে অথবা সেপ্টেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুন উর রশিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বার্ন ইউনিট প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৬৫ জন জনবলের প্রস্তাবনা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এর আগে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাক্স ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি।
জানা গেছে, সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চমেক হাসপাতাল র্কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও বার্ন ইউনিটের নির্মাণ কার্যক্রম স্থান নির্বাচন জটিলতায় আটকে ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির জন্য চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থান নির্বাচন করে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায় চীন সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।