যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি নিয়ে আদালতের সেই আদেশ বাতিল

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১২ জুন, ২০২৪ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর রহমতগঞ্জে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি দখলে নেওয়ার আদেশ বাতিল করেছে আদালত। গত সোমবার চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. খায়রুল আমিন এ আদেশ দেন। জালজালিয়াতির মাধ্যমে আদালতকে বিভ্রান্ত করে এম ফরিদ চৌধুরী নামে নগরীর মাঝিরঘাটের এক ব্যবসায়ী আদেশটি নিয়েছিলেন। তিনি চন্দনাইশের পশ্চিম এলাহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। আদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি তার লোকজন বাড়িটি ভেঙে দখল নিতে হাজির হয়। বাড়ির কিছু অংশ ভেঙেও ফেলেন।

একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে দখলদারদের হটিয়ে দেয় এবং বাড়িটি সরকারের দখলে নেয়। পরে আদালতে মিস মামলা দায়ের করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে আইনজীবী ফখরুদ্দিন জাবেদ মিস মামলাটি দায়ের করেন। গত ২ জুন উক্ত মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক ১০ জুন রায়ের জন্য রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রায় ঘোষণা করেন এবং ব্যবসায়ী এম ফরিদ চৌধুরীর জালজালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া আদেশ বাতিল করেন।

জেলা প্রশাসনের আইনজীবী রুবেল পাল আজাদীকে বলেন, জালজালিয়াতি করে ব্যবসায়ী এম ফরিদ চৌধুরী ডিক্রি নিয়েছিলেন। এ বিষয় সরকারপক্ষ জানত না। বাড়ি ভাঙার সময় সরকারের নজরে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ডিক্রি বাতিল চেয়ে আবেদন করি। দীর্ঘ শুনানি এবং যুক্তিতর্ক শেষে আদালত উক্ত ডিক্রি বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, এম ফরিদ চৌধুরী মূলত জমির রেজিস্ট্রেশন চেয়ে মামলা করেছিলেন। সে অনুযায়ী তিনি ডিক্রিও পেয়ে যান। একপর্যায়ে দখল চেয়ে জারি মামলা করলে সেখানেও এম ফরিদ চৌধুরীর পক্ষে আদেশ হয়। রুবেল পাল বলেন, এম ফরিদ চৌধুরীর মামলায় বাদী, বিবাদী দুই পক্ষের আইনজীবী ছিলেন একজন। মামলার নথিতে একজনের সিল, সাক্ষর রয়েছে। এটা তো অস্বাভাবিক। এছাড়া সম্পত্তিটি অর্পিত। অর্পিত সম্পত্তি তো বিক্রি বা ক্রয় করা যায় না। এরপরও এম ফরিদ চৌধুরী দাবি করছেন মিলন কান্তি সেনগুপ্ত নামের একজনের সাথে তার বায়না হয়েছে। আমরা লক্ষ করেছি, যাত্রামোহন সেনগুপ্তের কোনো স্বজন এখানে নেই। যিনি আছেন তিনি আনসাউন্ড মাইন্ড। এসব থেকে বোঝাই যাচ্ছে, জাল জালিয়াতি করে এবং আদালতকে বিভ্রান্ত করে বাড়ি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এম ফরিদ চৌধুরী।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি এম ফরিদ চৌধুরীর লোকজন, পুলিশ এবং আদালতের নাজির আমিনুল হক আকন্দ ‘দখল পরোয়ানা’সহ কাগজপত্র নিয়ে রহমতগঞ্জে অবস্থিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি প্রাঙ্গণে হাজির হন। বুলডোজার দিয়ে ভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়। খবর পেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে প্রতিরোধের মুখে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সিলগালা করে দেয়।

জানা যায়, ১৯ গণ্ডা ১ কড়া পরিমাণ যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িসহ জমিটি ছিল শত্রু সম্পত্তি। এর মধ্যে ১১ গণ্ডা ২ কড়া জমি ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি। পরে ১৯৭৫ সারের পর নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জালজালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত নথিপত্র সৃজন করে ২০০৫ সালে ব্যবসায়ী এম ফরিদ চৌধুরী মূল মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল পাকিস্তান
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ