কর্ণফুলীতে দেবর-ননদ মিলে অন্তঃসত্ত্বা ভাবিকে মারধর, থানায় মামলা

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ জুন, ২০২৪ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমোতে ভিডিও কল আসাকে কেন্দ্র করে ৭ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা ভাবিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে দেবর, ননদ ও ভাগ্নের বিরুদ্ধে। এতে আরো অভিযোগ তাঁদের মারধরের কারণে হাসপাতালে মৃত বাচ্চা প্রসব করেছে ভুক্তভোগী।

গত ১১ মে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের (৩নং ওয়ার্ড) ফজলুল করিম চেয়ারম্যানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

পরে ৮ জুন ভুক্তভোগী নারী (ছদ্মনাম) সোনিয়া (৩৭) বাদি হয়ে তাঁকে মারধর, জখম ও অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে তিন জনের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় মামলা (নং-০৮/২১৩) দায়ের করেন।

এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন।

মামলায় আসামিরা হলেন-উপজেলার বড়উঠান দৌলতপুর গ্রামের ফজলুল করিম চেয়ারম্যান বাড়ির মৃত কবির আহমদের ছেলে জোনায়েদুল হক (৩০), মঞ্জুর আলমের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার (৪৫) ও মৃত ফোরক আহমদের ছেলে মো. ইলিয়ার প্রকাশ বাবু (২৫)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মে মামলার বাদী সোনিয়ার ননদ রনি আকতার তাঁর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রনি আকতারের সাথে বসে কথা বলতে গিয়ে সোনিয়া লক্ষ্য করেন ‘মিসু নামে সেভ করা’ একটা নাম্বারের সাথে সে কথা বলছে। সোনিয়া তাঁকে স্বামী থাকার পরও অন্য কারো সাথে কথা না বলার জন্য নিষেধ করেন।

এর মধ্যে সোনিয়ার মেয়ে তারিন (১৪) ও তাঁর জ্যা সুমি আকতারসহ গত ৮ মে বিকেলে আড্ডা দিতে গিয়ে দেখেন রনি আকতারের মোবাইলে মিসু নামে ওই নাম্বার থেকে আবারো ইমুতে ভিডিও কল আসে। যা সোনিয়ার জ্যা ফোনটি রিসিভ করেন।

তারিন রনি আকতারকে বলেন তার মোবাইলে ইমুতে ভিডিও কল আসলে চাচী সুমি আকতার ফোনটি রিসিভ করেন। এ কথা শুনেই সোনিয়ার ননদ রনি আকতারের সাথে জ্যা সুমি আকতারের ঝগড়া শুরু হয়।

সুমি ও রনি বিবাহিত হওয়ার পরও অন্য ছেলের সাথে কথা বলায় তাদের মা নুর আয়েশা ও বোন শাহিনুর আকতারকে নালিশ দেন। ঘটনার একদিন পর সন্ধ্যায় রনি আকতার তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যান।

এরমধ্যে সোনিয়ার ননদ রনি আকতারের মোবাইল ফোনে ইমুতে ভিডিও কল আসলে তাঁর স্বামী মনছুর ফোনটি রিসিভ করেন। এতে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। গত ১০ মে দুপুরে ননদ রনি তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে। পরে একই দিন রাত ১০টার দিকে ইমোতে কল আসার বিষয়টি নিয়ে সোনিয়ার সাথে ঝগড়া শুরু করে। এমনকি আগের ঘটনার জন্য তাঁকে দোষারোপ করতে থাকেন।

গত ১১ মে দেবর জোনায়েদুল হক ও ননদ শাহিনুর আক্তার পূনরায় একই ইস্যুতে ঝগড়া শুরু করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে সোনিয়াকে। এসব শুনে প্রতিবাদ করলে ননদ শাহিনুর সোনিয়ার চুলের মুঠি ধরে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। দেবরও তখন কিল-ঘুষি মারেন।

সোনিয়া ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও ননদ শাহিনুর আক্তার হত্যার উদ্দেশ্যে তলপেটে জোরে লাথি মারলে সে মাটিতে পড়ে যায়। তাদের মারধরের কারণে সোনিয়া মারাত্মক আহত হন। আহত অবস্থায় সোনিয়ার স্বামী কোন রকমে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান।

পরদিন বিকালে সোনিয়ার গর্ভের বাচ্চা নড়াচড়া কম অনুভূতি হওয়ায় কর্ণফুলীর ফকিরনীরহাট এলাকার আইডিয়াল ল্যাবে একটি আল্ট্রা করেন। আল্ট্রা রিপোর্টে বাচ্চাকে মৃত বলে ঘোষণা করে ডাক্তার। পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হই। সেখানেও পুনরায় আল্ট্রা করলে ডাক্তার গর্ভের বাচ্চা মৃত বলে তথ্যে জানান।

এমন কি চমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় গত ২৭ মে রাত আড়াইটার দিকে সেই মৃত বাচ্চা প্রসব করে সোনিয়া। পরে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড হতে ওসিসি ওয়ার্ডে প্রেরণ করলে পরদিন সকালে সোনিয়াকে ছাড়পত্র দেন। এরপর কর্ণফুলী থানায় এসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, ‘এ মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে মামলার আইও এসআই অমিতাভ দত্ত বিষয়টি তদন্ত করছেন। অবশ্য এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় বিয়ে করায় ছুরিকাঘাতে প্রবাসী স্বামীকে খু ন করলো প্রথম স্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে একসাথে তিন সন্তানের জন্ম, পরিবারে খুশির জোয়ার