স্বামী–স্ত্রী দুজনে মিলে বিক্রি করেন তাদের জমজ নবজাতককে। বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্ত্রী মানব পাচারের মামলা করেন স্বামীর বিরুদ্ধে। সেই মামলা তদন্তের পর দুই জমজ শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত শনিবার পৃথক অভিযানে রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ও বায়েজিদের অক্সিজেন এলাকা থেকে পাঁচ মাস আগে বিক্রি হওয়া ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশু রায়ানকে তিন লাখ টাকায় এবং ফাহমিদাকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা আজাদীকে বলেন, শনিবার দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। আজকে (গতকাল) তাদের কোর্টে নেওয়া হয়। আদালত দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, নবজাতক বিক্রির ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মারধর করে স্ত্রী মুন্নী আকতারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন স্বামী মো. হাবিবুর রহমান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুন্নী মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, প্রসবের পর তার দুই নবজাতককে স্বামী হাবিবুর রহমান অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক তাদের মেয়ে রুমা আকতার ও ছেলে রেহান প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের ডাক্তার রোকসানা আকতার ও মামুনকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান বাচ্চা দুটি অসুস্থ। তাই তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাবিবুর রহমান মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।
পিবিআই জানায়, মামলার বাদী বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজসহ বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক পর্যায়ে তিনি সন্তানসম্ভবা হন। অন্যদিকে শিরু আকতার নামে এক নারীর কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি নবজাতক পুত্র সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন এবং রুনা আকতারের কোনো মেয়ে সন্তান না থাকায় তিনিও নবজাতক কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন। ঘটনাক্রমে উভয়ের সাথে রাশেদা বেগম নামে আরেক নারীর পরিচয় হয়। রাশেদা তাদেরকে আশ্বস্ত করেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে তিনি তাদেরকে পছন্দমতো নবজাতক ছেলে–মেয়ে এনে দিতে পারবেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাশেদা সন্তানসম্ভবা তথা মামলার বাদী মুন্নী আকতারের সাথে শিরু আকতার ও রুনা আকতারের পরিচয় করিয়ে দেন। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার রাশেদা বেগমকে তিন লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে এক লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এছাড়া বাদীর প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ প্রদানে তারা রাজি হন। রাশেদা বিষয়টি নিয়ে মুন্নী আকতারের সাথে আলোচনা করলে তিনি টাকার বিনিময়ে তার গর্ভে থাকা ২ সন্তান প্রসবের পরপরই দত্তক দিতে রাজি হন।
পিবিআই জানায়, মুন্নী আকতার তার স্বামী হাবিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করেন। তিনিও অর্থের বিনিময়ে দত্তক দিতে সম্মতি দান করেন।