চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা আজ থেকে

| শনিবার , ৮ জুন, ২০২৪ at ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট করা গরুছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার ১৯৪টি। তবু গতবারের ন্যায় এবারও স্থানীয় উৎপাদনে কোরবানি পশুর চাহিদা মিটবে না। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা কোরবানি পশু দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হবে কোরবানিদাতাদের।

এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামের স্থায়ীঅস্থায়ী হাটগুলোতে আজ শনিবার থেকে কোরবানির পশু বিকিকিনি শুরু হবে। এবার নগরে তিনটি স্থায়ী এবং সাতটি অস্থায়ীসহ ১০টি পশুর হাট বসবে। এসব বাজারে স্থানীয়ভাবে হৃষ্টপুষ্ট করা গবাদিপশুর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অন্তত ৫০ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু নিয়ে আসবেন বেপারিরা। গত কয়েকদিন ধরে বাজারগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানি পশু নিয়ে আসছেন বেপারিরা। গত রাতেও বাজারগুলোতে ট্রাকে ট্রাকে গরু এসেছে, যা অব্যাহত থাকবে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত। ফলে স্থানীয় উৎপাদনের বিপরীতে যে ঘাটতি তা দূর হয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে সংকট আছে ৩৩ হাজার ৪০৬টি কোরবানি পশুর। গতবার (২০২৩) স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। ওই হিসেবে এবার ১০ হাজার ১৯৪টি বেশি গরু উৎপাদিত হয় স্থানীয়ভাবে। তবে গত বছর চাহিদা ছিল ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি কোরবানি পশুর। অর্থাৎ গতবার স্থানীয় ৩৭ হাজার ৫৪৮টি কোরবানি পশুর সংকট ছিল। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু আসায় সে সংকট দূর হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন কম হলেও কোরবানি পশুর সংকট হবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারিরা পশু বিক্রির জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। প্রতি বছর যে হারে বাইরে থেকে পশু নিয়ে আসে তাতে চাহিদা মিটিয়ে আরো উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

কী পরিমাণ পশু অন্যান্য এলাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতি বছর গড়ে চল্লিশপঞ্চাশ হাজার কোরবানির পশু আসে চট্টগ্রামে। এবার দাম কেমন থাকতে পারে জানতে চাইলে বলেন, যেহেতু পশুর সংকট হবে না তাই দামও সহনশীল থাকবে আশা করা যায়।

বাজার মনিটরিংয়ে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, নগরের তিনটি বড় বাজারে ভেটেরিনারি টিম থাকবে। অন্যান্য বাজারগুলো কোনো সমস্যার কথা শুনলে সাথে সাথে টিম পাঠানো হবে। সেজন্য ভ্রাম্যমাণ টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া কন্ট্রোল রুম থাকবে।

গরুর সংখ্যা বেশি : জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট করা পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৭৫টি। এছাড়া ৭১ হাজার ৩৬৫টি মহিষ, ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৭৮৩টি ছাগল এবং ৫৮ হাজার ৬৯২টি ভেড়া রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর মধ্যে নগরের ডবলমুরিং থানায় ৯ হাজার ২৩৩টি, কোতোয়ালী থানায় চার হাজার ২৫৪টি এবং পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১৯ হাজার ১১২টি গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলায় ৪৫ হাজার ২৮০টি, চন্দনাইশে ৪৪ হাজার ৬০টি, আনোয়ারায় ৬৬ হাজার ৩৬৩টি, বোয়ালখালীতে ৪৭ হাজার ৯৭৯টি, পটিয়ায় ৭১ হাজার ১১২টি, কর্ণফুলীতে ২৯ হাজার ৩৫৫টি, মীরসরাই উপজেলায় ৫৭ হাজার ৮৮৩টি, সীতাকুণ্ডে ৫৩ হাজার ৮০৪টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৯৮১টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ হাজার ১১টি, ফটিকছড়িতে ৭৪ হাজার ৫২৯টি, লোহাগাড়ায় ৪৮ হাজার ৮৯৮টি, রাউজানে ৪১ হাজার ২৯টি, বাঁশখালীতে ৬১ হাজার ৮৮৩টি এবং সন্দ্বীপে ৮২ হাজার ৮০৭টি গবাদিপশু রয়েছে।

উল্লেখ্য, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে কোরবানি দেওয়া হয়েছিল ৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০টি গবাদিপশু। এর আগে ২০২১ সালে ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৫৫টি, ২০২০ সালে ৭ লক্ষ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি, ২০১৯ সালে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৮৯টি পশু জবাই দেয়া হয়েছিল।

নগরের বসবে ১০ হাট : গতবার নগর ও উপজেলায় ২২২টি স্থায়ীঅস্থায়ী হাটে বসে। তবে এবার উপজেলায় কয়টি হাট বসবে তা জানাতে পারেনি জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বাজারের তালিকা করে ডিসি অফিস। তালিকাটা রোববার (আগামীকাল) পাওয়া যাবে।

এদিকে নগরে পশুর হাট বসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায়। সংস্থাটি এবার সাতটি অস্থায়ী হাটে ইজারাদার নিয়োগ দেয়। এর সঙ্গে আছে তিনটি স্থায়ী হাট। অর্থাৎ নগরে ১০টি স্থায়ীঅস্থায়ী হাট বসছে এবার। এর মধ্যে স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।

অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী পশুর বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪১ নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ ও একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ।

গতকাল নগরের বিভিন্ন অস্থায়ী হাটে দেখা গেছে, কয়েকটি বাজারে অল্প গরু এসেছে। বাজারগুলোতে শামিয়ানা টাঙানোসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি চলছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ, মাঠ পরিষ্কার, খুঁটি স্থাপনসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন ইজারাদারের প্রতিনিধিরা।

সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদার শিবু দাশ আজাদীকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে প্রচুর গরু আসছে। চসিক থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা শতভাগ না পাওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, নালা এখানো পরিষ্কার হয়নি। বৃষ্টি এলে অবস্থা খারাপ হবে। লাইটপানি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি।

চসিকের সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন আজাদীকে বলেন, সবগুলো বাজারে যাবতীয় সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে ব্যবসায়ীর ওপর হামলা, ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনতাই
পরবর্তী নিবন্ধপদায়ন করা চিকিৎসক যোগ দেননি তিন মাসেও