সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে ‘হত্যার জন্য অপহরণের’ মামলায় গ্রেপ্তার তানভীর ভুঁইয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
তানভীরের জবানবন্দির আবেদনে বলা হয়, গত ৬ মে তিনি বেনাপোল হয়ে কলকাতা যান। কলকাতার সল্টলেক আর নিউ টাউনের মাঝামাঝি ত্রিশিব নামের হোটেলে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিমুল ভুঁইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্য করেন। এমপি আনারকে কলকাতায় নিতে অন্যদের সঙ্গে তিনিও প্রলুব্ধ করেন। খবর বিডিনিউজের।
সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ–পরিদর্শক জালাল আহমেদ বলেন, ১৬৪ ধারার আবেদনে যা বলা হয়েছে, সেরকমই (তানভীরের) জবানবন্দিতে এসেছে। রিমান্ড চলাকালে তানভীর ‘স্বেচ্ছায়’ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন জানিয়ে জালাল উদ্দিন বলেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তানভীরের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। পরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন তার খাসকামরায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি জবানবন্দি দেবেন কিনা, সে বিষয়ে ভাবার জন্য তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। তিনি রাজি হলে বিচারক তার বক্তব্য রেকর্ড করেন।
আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি সেলেস্টি রহমানের জবানবন্দি গত সোমবার রেকর্ড করেন বিচারক তোফাজ্জল হোসেন। সেদিন দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেলেস্টি হাকিমের খাস কামরায় ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জবানবন্দিতে সেলেস্টি কী বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে তার নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন কিনা, এ বিষয়ে আদালতের পুলিশ, তদন্ত সংস্থা বা অন্য কোনো কর্মচারীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে এমপি আনার হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম হোসেনকে নেপাল কর্তৃপক্ষ যদি ভারতের কাছেও হস্তান্তর করে, তাতেও তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, যদি একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুই দেশ একজনকে দাবি করে, তবে হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে নেপাল বিবেচনায় আনবে অপরাধের ধরনটা কী। হত্যা মামলা কোথায় হয়েছে। নেপাল বিভিন্ন বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেবে সিয়ামকে কোন দেশের কাছে হস্তান্তর করবে।
এমপি আনার হত্যার তদন্তে হারুনের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত শনিবার নেপালে যায়। সেখান থেকে ফিরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হারুন। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ‘প্রধান পরিকল্পনাকারী’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন নেপাল হয়েই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। সে বিষয়ে আমাদের তথ্য সংগ্রহের বিষয় ছিল। পাশাপাশি এই হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম এখন নেপালে গ্রেপ্তার হয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছে। ঢাকার পুলিশ এ দুইজনকেই দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে।