শয্যার হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। ঢামেক হাসপাতালের শয্যা ২৬০০। অপরদিকে চমেক হাসপাতালের শয্যা ২২০০। চলতি ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঢামেক হাসপাতাল (বেতন ভাতা ছাড়া) বরাদ্দ পেয়েছে ২০২ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার। অন্যদিকে চমেক হাসপাতাল পেয়েছে ৯৯ কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় ১ হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের বরাদ্দ পায় ১১৩ কোটি ২৮ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং ১২’শ শয্যার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) বরাদ্দ পেয়েছিল ১০৭ কোটি ৩০ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এছাড়া ৯০০ শয্যার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরাদ্দ পেয়েছে ৭৬ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, ১ হাজার শয্যার শের–ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরাদ্দ পেয়েছে ৯০ কোটি ৩৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা, ১ হাজার শয্যার রংপুর মেডিকেল কলেজ পেয়েছে ৮৩ কোটি ৮০ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং ৯০০ শয্যার সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পেয়েছে ৭৯ কোটি ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চমেক হাসপাতাল অর্থ বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে চতুর্থ স্থানে। শয্যা হিসেবে দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তুলনায় চমেক হাসপাতালের বরাদ্দ বৈষম্যমূলক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা, ফেনীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার অন্তত ৪ কোটি মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। অবস্থার প্রেক্ষিতে
৫শ শয্যা থেকে বাড়িয়ে গত ২০১৩ সালে এক হাজার ৩১৩ শয্যা এবং সর্বশেষ গত ২০২২ সালের জুনে ২ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। শয্যা বাড়লেও এখনো ৫শ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে চমেক হাসপাতাল। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যার বাড়ানোর পরেও হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী সেবা নেন। তাই এই বিশাল সংখ্যক রোগীকে যথাযথ সেবা দিতে হলে আগামী ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে চমেক হাসপাতালে শয্যার আনুপাতিক হারে বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেতন ভাতা ছাড়া প্রাপ্ত এই বরাদ্দ খাবার, অঙিজেন, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ, কেমিক্যাল রিএজেন্ট, গজ ব্যান্ডেজ, কটনসহ জরুরি জিনিসপত্র কেনা হয়ে থাকে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, চমেক হাসপাতালের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রী–এমপিরা কেউ ভাবেন বলে আমার মনে হয় না। উনারা সব সময় নিজেদের পদ পদবী, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নিয়ে সরকার প্রধান কিংবা তাদের দলীয় প্রধানের সাথে দেনদরবারে ব্যস্ত থাকেন। যার ফলে স্বাস্থ্যের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের মনোযোগ নেই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে গরীব রোগীরা। এসব হাসপাতালের বাজেট স্বল্পতার কারণে রোগীরা ওষুধ পাচ্ছে না, যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে পরীক্ষা করাতে পারছে না। এখন চট্টগ্রামের এমপি–মন্ত্রীরা এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে কিংবা টানেল নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। অথচ চমেক হাসপাতালের বাজেট বরাদ্দ কেন দেশের কম শয্যার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়েও কম সেটি নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। তবে আমাদের কথা হলো–আগামী অর্থবছরের বাজেটে যেন শয্যার আনুপাতিক হারে যেন বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাসপাতালের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখা হয়েছে। একইসাথে আমরা জনবলের চাহিদাও দিয়েছি। হাসপাতাল এখনো জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। তাই আমরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৮টি পদে ৫০৪ জনকে নিয়োগের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।