ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখা থেকে দেড়শ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েবের অভিযোগ তুললেও এখনো মামলা করেননি গ্রাহক। গতকাল রোববার রাতে মামলা দায়েরের জন্য গেলেও চকবাজার থানা পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত (রাত ১০টা) কেউ এজাহার দায়ের করেননি। এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী গতকাল দুপুরে তার চট্টেশ্বরী রোডের বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকারে তিনি সাত থেকে আটটি বক্সে প্রায় দেড়শ ভরি স্বর্ণালংকার রেখেছিলেন। গত ২৯ মে ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পান, ৯–১০ ভরি স্বর্ণ ব্যতীত অন্য স্বর্ণালংকারগুলো গায়েব। নিয়ম অনুযায়ী লকার ইনচার্জ মূল ফটক খুলে দেন। ওইদিন তিনি মূল দরজা খুলে দিয়ে আমার কাছে লকার নম্বর কত জানতে চান। আমি নম্বর বলার পর জানান, আমার লকার খোলা। এ ঘটনার পর চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ বলে, সাধারণ ডায়েরি নয়, মামলা করতে হবে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর আজাদীকে বলেন, ঘটনার দিনও বলেছি এজাহার দিতে। আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এজাহার দেয়নি। আজকে (গতকাল) সন্ধার পর তারা এসেছিলেন। তবে এজাহার দেননি। যদি এজাহার দেয় আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ব্যাংকের বক্তব্য : গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে বক্তব্য জানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। গতকাল ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী ও তার কন্যা নাসিয়া মারজুকা যৌথ নামে ২০০৬ সাল থেকে ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিটি লকার খোলার জন্য ২টি চাবির প্রয়োজন হয়। যার একটি গ্রাহক ও অপরটি ব্যাংকের নিকট থাকে। গ্রাহকের চাবি ব্যতীত শুধুমাত্র ব্যাংকে রক্ষিত চাবি দিয়ে কোনোভাবে লকার খোলা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহককে তার লকারের মূল চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। লকারে রক্ষিত মালামাল ও তার পরিমাণ সম্পর্কে একমাত্র গ্রাহক ব্যতীত ব্যাংকার বা অন্য কোনো ব্যক্তির জানার সুযোগ নেই।
গত ৮ এপ্রিল উক্ত গ্রাহক লকার ব্যবহারের জন্য ব্যাংকে আসেন। ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের উপস্থিতিতে মাস্টার কী (চাবি) দিয়ে লকার আনলক করেন। পরে গ্রাহক যথারীতি তার নিকট রক্ষিত চাবি ব্যবহার করে পরিপূর্ণভাবে লকার খুলে তার কাজ শেষে লকার বন্ধ করে ব্যাংকারকে অবহিত করে চলে যান। যেহেতু লকার হোল্ডারের চাবি দিয়ে বন্ধ করা হয় সেহেতু লকার বন্ধ করার সময় নিয়ম মোতাবেক ব্যাংকের কারো উপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। একমাত্র তিনিই তার লকার বন্ধ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, লকার হোল্ডার লকার বন্ধ না করা পর্যন্ত তার চাবি বের করে আনা যায় না। গ্রাহক নির্দিষ্ট লকারে কী নিয়ে গেছেন বা রেখে গেছেন তা ব্যাংকের জানার সুযোগ নেই। গ্রাহক যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাংক কর্মকর্তা লকার রুমের মূল ফটক নিয়ম মাফিক তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন।
২৯ মে উক্ত লকার হোল্ডার তার লকার ব্যবহার করতে এসে তার গহনা খোয়া গেছে বলে জানান। অথচ এর আগে তিনি নিজে লকার বন্ধ করে চাবি নিয়ে গেছেন। তারপর লকার হোল্ডার একবার বলেন তার ৩০০ ভরি স্বর্ণ নাই, কিছুক্ষণ পর আবার জানান ১৫০ ভরি স্বর্ণ নাই এবং কিছুক্ষণ পর আবার জানান ১৫০ ভরির মধ্যে অর্ধেক পেয়েছেন, বাকি অর্ধেক পান নাই। তিনি এ ধরনের স্ববিরোধী বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করেন। কিছুক্ষণ পর চকবাজার থানার পুলিশ ফোর্স সরেজমিনে লকার রুম পরিদর্শন করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৩ সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির প্রদত্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিডিনিউজ জানায়, রোকেয়া আক্তারের অভিযোগের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) ও চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক এসএম শফিকুল মাওলা চৌধুরী বলেন, অভিযোগকারী নারী ২০০২ সাল থেকে আমাদের গ্রাহক। স্বর্ণ মিসিংয়ের বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে আমাদের জানিয়েছেন, তবে লিখিতভাবে কিছু বলেননি। আমরা মৌখিক অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং অভিযোগের সত্যতা জানতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গ্রাহককে বলেছি বিষয়টি তারা যেন খোঁজ নেন। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে খোঁজ নিচ্ছি। সোমবার পর্যন্ত তারা আমাদের সময় দিয়েছেন।
ব্যাংকে লকারের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, লকারের মূল ফটকের চাবি থাকে শুধু তাদের নির্ধারিত কর্মকর্তার কাছে। লকারের মূল চাবি গ্রাহক ছাড়া অন্য কারো কাছে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি গ্রাহকের কোনো মনোনীত প্রতিনিধিও লকার খুলতে পারেন না।
ওই গ্রাহকের কী পরিমাণ স্বর্ণালংকার রাখা ছিল সে বিষয়েও জানার সুযোগ থাকে না বলে জানান শফিকুল মাওলা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একজন গ্রাহক ভল্ট ব্যবহার করলে সেখানে কোনো দাহ্য কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র রাখবেন না বলে ঘোষণা দেন। বাকি পণ্যের বিষয়ে গ্রাহকের ঘোষণা নেওয়ার কোনো সুযোগ ব্যাংকের নেই।












