বাবা, শুধু তোমার জন্য

সুইটি চৌধুরী পূর্বা | রবিবার , ২ জুন, ২০২৪ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীতে মধুরতম শব্দের আর অনুভূতির একটি নাম বাবা। যিনি সারাজীবন বহন করেন সন্তানদের ভরণপোষণসহ সমস্ত দায়িত্ব। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে, আর তাদের মানুষের মত মানুষ করতে নীরবে, নিভৃতে সংসার নামক জাহাজ চালিয়ে তীরে পৌঁছাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, আর নিজের জীবনের ভোগবিলাসকে তুচ্ছ করে সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তিনিই বাবা। এভাবে যে বাবা মা ও বাবার সব দায়িত্বই সমান পালন করেন, তিনিই মহান, শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে। আবার তেমন বাবাও দেখেছি, যে বাবা সন্তান জন্ম দিয়েই নিজের ভোগবিলাস আর অধিকতর সুখের আশায় নিজের সন্তানকে পর্যন্ত ছেড়ে চলে যান! ধিক্কার জানাই তেমন বাবার মনুষত্ব্যকে। কিন্তু আমি দেখেছি আমার বাবাকে, যিনি মানুষ নন, দেবতুল্য। যার হাত ধরেই আমি বিচিত্র এই পৃথিবীকে চিনেছি, ভালোবাসতে শিখেছি মানুষ, প্রকৃতি আর গানকে। খুঁজে পেয়েছি আত্মপরিচয়। বাবা যখন ভোরে উঠে বা চাকরি থেকে ফিরে পড়ন্ত বিকেলে কিছুক্ষণ নিজের হাতে বাগান পরিচর্যা করতেন, গাছেদের সময় দিতেন, ছোট মনে জানতে চেয়েছি, ‘ওরা কি তোমাকে চিনে’? বাবা বলতেন, খুব চিনে, তুমিও ওদের সময় দাও, তোমাকেও গাছের চিনবে, ভালোবাসবে। আবার গ্রাম থেকে প্রতি সপ্তাহে মফঃস্বল শহরে নিয়ে গিয়ে ওস্তাদের কাছে গানের তালিম নেয়া, সংস্কৃতি চর্চায় ও ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। এভাবে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাবার হাত ধরে চলতে গিয়ে দেখেছি শহরের উদ্দেশ্যে ভ্রমণের সময় গাড়িতে যখন কোনও অসুস্থ বয়স্ক লোক ছিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, বাবা তখন নিজের সীটে বৃদ্ধ লোককে বসিয়ে, নিজে দাঁড়িয়ে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতেন! শিখলাম, এরই নাম মানবতা। সারাজীবন নিবেদন করেছেন শিক্ষকতা নামক মহান পেশায়! পরম যত্নে হাজার, হাজার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়েছেন নিজের সন্তানতুল্য ভালোবাসায়! তাঁর কাছেই শিখেছি মানুষে, মানুষে কোনও ভেদাভেদ নেই। তাইতো মানবপ্রেমী বাবাই বলতেন, ‘গজলটা ভালো হচ্ছে, আরো ভালো করে গাইতে হবে’। মনে পড়ে কোনও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আগে রাতের পর রাত জেগে অনুশীলনের সময় বাবা পাশে বসে থাকতেন, কখনো আবার ফ্লাস্ক গরম পানি, আদা চা করে নিজেই খাওয়াতেন। এই বাবাই জীবনের নানা ঘাত, প্রতিঘাতে, সুখে দুঃখে সবসময় দিয়েছেন সাহস। জুগিয়েছেন অনুপ্রেরণা। বাবার কাছেই শিখেছি ত্যাগেই শান্তি, ত্যাগেই তৃপ্তি। শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, পারিবারিক জীবনেও শুধু ত্যাগ করেই গিয়েছেন আজীবন। জানতে চাইলে বলেছেন, থাক্‌ মা ছেড়ে দাও, ত্যাগই সুখ। তেমন বাবার সন্তান হয়ে আমি পৃথিবীতে ধন্য। বাবা, আমার জীবনের যতকিছু প্রাপ্তি, যা কিছু অর্জন সবই শুধু তোমারই জন্য। বিধাতা যেন সবসময় ভালো রাখেন তোমাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসফল ওরা হবেই
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে