প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হলেও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কন্ডিশন ও পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু তাতে যে খুব সন্তুষ্টি এসেছে তা নয়। বাংলাদেশ তাদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শেষ করেছে হার দিয়ে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বের লড়াই শুরু হওয়ার আগে গতকাল রাতে বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয়ে হেরেছে ৬০ রানের ব্যবধানে। ভারতের ৫ উইকেটে ১৮২ রানের জবাবে বাংলাদেশ থামে ৯ উইকেটে ১২২ রান করে। বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নামার আগে বাংলাদেশের নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ ছিল ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচটি। তবে এ ম্যাচেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। এক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া আর কেউই ব্যাট হাতে ভালো করতে পারেননি। ১৮৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ দলের স্কোরবোর্ডে ১০ রান উঠতেই সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার, লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত। এর মধ্যে সৌম্য
আর শান্ত রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সৌম্য ২ বলে ০ আর শান্ত ৬ বলে করেন ০। অফ ফর্মে থাকা লিটন ৮ বলে ৬ করে বাজেভাবে ফেরেন বোল্ড হয়ে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ২৭ রান তুলে ম্যাচ থেকে আদতে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তাওহিদ হৃদয় আর তানজিদ হাসান তামিম হাল ধরার চেষ্টা করলেও টি–টোয়েন্টির খেলাটা খেলতে পারেননি। তামিম ১৮ বলে ১৭ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হন। বড় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন হৃদয়, করেন ১৪ বলে ১৩। এরপর দলের সবচেয়ে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন। যদিও জয়ের সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের। সাকিব–মাহমুদউল্লাহ গড়েন ৭৫ রানের জুটি। সাকিব অবশ্য এই জুটিতে একদমই স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ১০ বল বাকি থাকতে আউট হন তিনি। ৩৪ বলে সাকিবের ২৮ রানের ধীরগতির ইনিংসে ছিল মাত্র দুটি বাউন্ডারির মার। ২৮ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৪০ করে স্বেচ্ছায় অবসরে যান মাহমুদউল্লাহ। রিশাদ হোসেন ৫ আর জাকের আলী অনিক ফেরেন ০ করে। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১২২ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। মাহাদি হাসান অপরাজিত থাকেন ৩ রানে।
ভারতের অর্শদীপ সিং আর শিভাম দুবে নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নেন জাশপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ, হার্দিক পান্ডিয়া ও আকসার প্যাটেল।
এর আগে বিশ্বকাপের জন্য গড়া নিউইয়র্কের নাসাউ স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামে গতকাল বাংলাদেশ–ভারত। এদিন টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শরিফুল ইসলাম ও শেখ মেহেদীর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পরও রোহিত শর্মার দল বড় পুঁজি পায়। বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তানভীর ইসলামের খরুচে দিনে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন রিশাভ পান্ত এবং হার্দিক পান্ডিয়ারা। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ভারত ৫ উইকেটে ১৮২ রান সংগ্রহ করে। শুরুতে ভারতের ব্যাটিং ছিল ধীরগতির। শরিফুল–মেহেদীর বোলিং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল। পরে সাকিব ৪ ওভারে ৪৭ রান খরচ করেন। কোনো উইকেট পাননি তিনি। বাঁ–হাতি স্পিনার তানভীর ২ ওভারে দিয়েছেন ২৯ রান, যদিও উইকেট নিয়েছেন একটি। ভারতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান সঞ্জু স্যামসন। শরিফুলের করা কিছুটা ইনসুইংয়ে বোকা বনে এলবিডব্লিউ হন ১ রান করে। এরপর রোহিত–পান্ত মিলে ঝড় শুরু করেন। মাহমুদউল্লাহর বলে আউট হওয়ার আগে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা ১৯ বলে ২৩ রান করেন। এরপর পান্তকে ৪৪ রানের জুটিতে সঙ্গ দেন সূর্যকুমার যাদব। সূর্য ১৮ বলে ৩১ রান করে ক্যাচ দেন তানভীরের বলে। মাঝে শিবাম দুবে ১৬ বলে ১৪ রান করতে গিয়ে বেশ লড়াই করেছেন টাইগার বোলারদের সামনে। এর আগে অবশ্য ফিফটি করে মাঠ ছেড়ে যান পান্ত। ৩২ বলে ৪টি করে চার–ছক্কায় ৫৩ রান করে তিনি রিটায়ার্ড হার্ট হন। পান্ত বেশি চড়াও হয়েছেন সাকিবের ওপর। টাইগার স্পিনারের এক ওভারেই তিন ছয়সহ ২২ রান তোলেন পান্ত। পরবর্তীতে তানভীরকে একই লেংথে ফেলা পরপর তিন বলে ছয়ের হ্যাটট্রিক করেন হার্দিক। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ২৩ বলে ৪০ রানে। শেষদিকে বাংলাদেশের অস্বস্তি বাড়িয়ে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়েন শরিফুল। তার চোট কতটা গুরুতর জানা যায়নি। মাঠ ছাড়ার আগে বাঁ–হাতি এই পেসার ৩.৫ ওভারে ২৬ রানে ১ উইকেট শিকার করেন। ৪ ওভারে ২২ রানে একটি শিকার করেন মেহেদী; মাহমুদউল্লাহও নেন এক উইকেট।