দুর্যোগ নিয়ে আবহাওয়ার আগাম বার্তা দিয়ে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু যে রাডার স্টেশনের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়, সেটিই ১০ মাস ধরে অকেজো হয়ে আছে। দীর্ঘদিনের এমন দুরবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সরেজিমেন গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজে রাডার স্টেশনটির অবস্থান। গত ১০ মাস ধরে অকেজো এই রাডার স্টেশনটি পাহারা দিচ্ছেন বেশ কজন পুলিশ সদস্য। তারা বলেন, এখানে কেউ থাকে না বা কারো অফিস নেই। যদি কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন হয় তাহলে কঙবাজার আবহাওয়া অফিসে যেতে হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ১৯৬৯ সালে সুইডিশ শিশুকল্যাণ সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় কক্সবাজার রাডার স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল জাপান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় রাডার সিস্টেমের উন্নয়ন করা হয়। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার রাডারটির মেয়াদকাল ১০ থেকে ১২ বছর। ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাডার স্টেশনটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। এরপর থেকে রাডারটি কাজ করছে না।
কঙবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থান, পূর্ব আবহাওয়ার ইতিহাস, তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বায়ুর আর্দ্রতা, জলবায়ু, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বনাঞ্চলের পরিমাণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও প্রাপ্ত তথ্য নিয়ম অনুযায়ী ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। পরে সে তথ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে বিদ্যমান আবহাওয়া ও অদূর ভবিষ্যতের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়ে থাকে।
প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের এই জেলায় জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে আবহাওয়া–জলবায়ুর। আবহাওয়া কেমন যাবে, কবে খরা, কবে বৃষ্টিপাত, কখন কী পরিস্থিতি এসব বিষয়ে জানার শেষ ভরসা আবহাওয়া অফিস। কিন্তু আবহাওয়া অফিসের এখন বেহাল দশা। উন্নত প্রযুক্তির এ সময়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসের জন্য চেয়ে থাকে আকাশপানে। খোদ নিজেদের দুরবস্থার কথা জানালেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ নিয়ে জনসাধারণের মাঝে হাসাহাসি তো আছেই। আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে মানুষের আস্থা এখন তলানিতে।
সাধারণ মানুষজন বলছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তা সঠিক নয়। মনগড়া পূর্বভাস দেয়ার ফলে যেকোনো দুর্যোগের সময় বিপদে পড়ে যায় কঙবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন। যার চাক্ষুষ প্রমাণ ঘূর্ণিঝড় রেমাল।
কঙবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান বলেছেন, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বন্ধ রাডার। সার্কিট হাউসের উপরে অবস্থিত রাডার অফিসে নেই কোনো ইঞ্জিনিয়ার। নতুন রাডারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও একটি বছর। আগামী অর্থবছরে নতুন রাডার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।