সাতকানিয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীদের ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদুল হক (৩২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে তার বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের মিঠার দোকান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদুল হক ছদাহার ৫ নং ওয়ার্ডের আজিমপুর দেওয়ান আলী সিকদার পাড়ার বদিউল আলমের ছেলে।
নিহতের বড় ভাই আজিজুল হক জানান, তার ছোট ভাই মোহাম্মদুল হক এলাকায় মাছের খাদ্য উৎপাদনকারী একটি মিলে চাকরি করে। রোববার সকালে কাজের ফাঁকে পার্শ্ববর্তী ফেরদৌসের চায়ের দোকানে গিয়ে নাস্তা করে। ১৭ টাকা নাস্তার বিল আসে। এ সময় মোহাম্মদুল হকের সাথে টাকা না থাকায় নাস্তার বিলটা বিকালে দেওয়ার কথা জানায়। তখন দোকানদার ফেরদৌসের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী মো. রায়হান জানায়, বিকালে দেওয়া যাবে না, এখন দিতে হবে। পরে মোহাম্মদুল হক মিলের ম্যানেজারের কাছ থেকে টাকা এনে বিল দিয়ে দেয়। এরপর রায়হান জানায়, আমার বাবা ও অন্য ভাইদের কাছ থেকেও বকেয়া টাকা পাবে। তখন মোহাম্মদুল হক বিষয়টি বাবা ও আমাদেরকে জানায়। সোমবার দুপুরের দিকে আমি মোহাম্মদুল হককে নিয়ে ফেরদৌসের চায়ের দোকানে যাই। আমাদের পুরো পরিবারের কাছে কত টাকা বকেয়া পাবে তা জানতে চাই। এ সময় ফেরদৌসের ছেলে রায়হান হঠাৎ উত্তেজিত হয় এবং আমাদের গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে ফেরদৌস ও তার ছেলে রায়হানের সাথে আমাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
আজিজুল জানান, সোমবার দুপুরের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগকর্মী রায়হান তার বন্ধু সোহাগ, সাইফুল, সাইমুন ও তাছিবসহ ৮–১০ জনের দল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মোহাম্মদুল হকের বাসায় গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে তারা আমার বাবার ওপরও হামলা চালায়। বিষয়টি নিয়ে ঘটনায় জড়িতদের সাথে আমার বড় ভাই এনামুল হক কথা বলেন। তখন ঘটনায় জড়িতরা এ বিষয়ে আগামীতে আর কোনো ধরনের ঝামেলা করবে না অঙ্গীকার করে।
এদিকে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে মোহাম্মদুল হক ও তালতো ভাই আরিফ বড় ভাই জিয়াবুল হকের সিএনজি টেঙিযোগে মিঠার দোকান এলাকার জাকির হোসেনের চায়ের দোকানের সামনে যায়। সেখানে তাদের দেখা মাত্র আগে থেকে জাকিরের চায়ের দোকানে থাকা ছাত্রলীগকর্মী রায়হান, সোহাগ, সাইফুল, সাইমন ও তাছিব বের হয়ে মোহাম্মদুল হককে অতর্কিত ছুরিকাঘাত করতে শুরু করে। আমার ভাই জিয়াবুল ও তালতো ভাই আরিফ বাধা দিতে গেলে তাদেরকেও ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ঘটনাস্থলে ফেলে চলে যায়।
তারা পালিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আমার ভাইদের উদ্ধার করে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার ডাক্তার মোহাম্মদুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত জিয়াবুল এখন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নিহতের বড় ভাই এনামুল হক জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার আমি সোহাগদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছিল দোকানের বিল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আর কোনো ঝামেলা করবে না।
প্রত্যক্ষদর্শী চায়ের দোকানদার জাকির হোসেন জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে থেকে কয়েকজন ছেলে আমার দোকানে বসা ছিল। পরে সিএনজি টেঙিতে করে মোহাম্মদুল হকরা ঘটনাস্থলে আসার সাথে সাথে তারা ছুরি বের করে। এক পর্যায়ে মোহাম্মদুল হক ও জিয়াবুল হককে ছুরিকাঘাত করে তারা পালিয়ে যায়।
ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতা–কর্মী এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার বলেন, ছুরিকাঘাতে এক ভাই নিহত ও এক ভাই আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে।