প্রচারণা শেষ, ভোটের অপেক্ষা

আনোয়ারা চন্দনাইশ পটিয়া বোয়ালখালী বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামবে আজ

শুকলাল দাশ | মঙ্গলবার , ২৮ মে, ২০২৪ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

রাত পোহালেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে চার উপজেলায় ভোটগ্রহণ। এক টানা ১৫ দিনেরও বেশি এই চার উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের টানটান উত্তেজনার প্রচারপ্রচারণা গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। আগামীকাল ২৯ মে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটগ্রহণ। সকাল সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীন বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই চার উপজেলার ৩৫৬ ভোট কেন্দ্রের ২৩৫৭ বুথে ভোটগ্রহণ চলবে। চার উপজেলা নির্বাচনে ৫০ জন প্রার্থী (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার নির্বাচনী চার উপজেলায় সকাল থেকেই নামছেন বিজিবিসহ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ব্যাটালিয়ানের ফোর্স। চার উপজেলায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণে গতকাল থেকে ৬০ জন নির্বাচনী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ২৭ মে ৩১ মে পর্যন্ত তাঁরা নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ আজাদীকে বলেন, অবাধসুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা যা প্রস্ততি দরকার সব নেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে কোনো ছাড় নেই। শুরু থেকে প্রতিটি উপজেলা নির্বাচনকে আমরা সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ ও বোয়ালাখালীএই চার উপজেলা নির্বাচনে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোট হবে ভোটের মতো। আমাকের কেউ ফোন করে প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। আমি সবার কথা শুনিকিন্ত কাজ করি আমি আমার নিজ সিদ্ধান্ত মোতাবেক। ভোট কেন্দ্রে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। সব কেন্দ্রই আমাদের কঠোর নজরদারীতে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী আজাদীকে বলেন, অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ছাড়াও ৬৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং চার উপজেলায় ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোট কেন্দ্র এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা : চট্টগ্রামের ৪ উপজেলায় আগামীকালের ভোট গ্রহণের জন্য ৩৫৬ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ২৩৫৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৪৭১৪ জন পোলিং অফিসার নির্বাচর্নী সামগ্রী (ব্যালট পেপার ছাড়া) নিয়ে আজ সকাল থেকে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নেবেন। চট্টগ্রামের ৪ উপজেলায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫৬টি। বুথের সংখ্যা ২৩৫৭টি।

৪ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ : আগামীকাল চট্টগ্রামের ৪ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সোমবার থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোট ৫ দিন দায়িত্ব পালন করবেন তারা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) মো. আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বঙ ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেওয়া, ভোটকেন্দ্রে পরিবেশকে ভোটের উপযোগী না রাখা এসব অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারবেন।

চট্টগ্রামের চার উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হারুন বোয়ালখালী উপজেলায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুমিনুন্নিসা খানম আনোয়ারা উপজেলায়, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাররাহুম আহমেদ পটিয়া উপজেলায় এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম চন্দনাইশ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।

গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে চন্দনাইশের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ চৌধুরী হাইকোর্টে তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পান। গতকাল মহামান্য হাইকোর্ট চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু আহমেদ চৌধুরীর প্রার্থিতা বহাল রাখেন।

আমাদের পটিয়া প্রতিনিধি শফিউল আজম জানান, আগামীকাল ২৯ মে পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন পটিয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভা সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস) ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার (দোয়াতকলম)। গতকাল সোমবার প্রচারণার শেষ দিনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন।

উপজেলায় মোট ১২৮ টি কেন্দ্রে পটিয়ার ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ব্যালটের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৮ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৬ জন।

আমাদের আনোয়ারা প্রতিনিধি এম. নুরুল ইসলাম জানান, আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই দিন ধরে বৃষ্টির বাধা নানা প্রতিকূলতায় পেরিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৬ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১১ প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা শেষ করেছেন। দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে তাল মিলিয়ে তিন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ছয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১১ প্রার্থী বৈরী ঝড়ো হাওয়া উপেক্ষা করে নিজ নিজ প্রচারণা কাজ শেষ করেছে। উপজেলার ৭৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রেখেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান ঘোষণা মধ্য আজ মঙ্গলবার থেকে মাঠে বিজিবি টহল দিবে। এছাড়া একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে র‌্যাবের টিম। এছাড়া বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে ৩শতাধিক পুলিশ। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবু জাফর সালেহ বলেন, ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিযুক্ত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিকিৎসার সক্ষমতা বাড়লেও আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট
পরবর্তী নিবন্ধনির্মাণাধীন মাদ্রাসার দেয়াল ধসে পথচারী নিহত