দলীয় কর্মসূচি কিংবা সভা–সেমিনারে তাদের হাসিমুখে দেখা গেলেও নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়েছেন। ২৯ মে এর ভোটে লংগদু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার এবং বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু। একই পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও। চেয়ারম্যান পদে আব্দুল বারেক সরকার ঘোড়া প্রতীকে, বাবুল দাশ (বাবু) আনারস প্রতীকে, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দোয়াত কলম প্রতীকে এবং প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আবছার আলী মোটর–সাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগ নেতা। তবে আবছার আলী একসময় রাঙামাটি জেলায় বাঙালি জনগোষ্ঠীভিত্তিক সংগঠন ‘সম–অধিকার আন্দোলনের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নির্বাচনের মাঠে সব প্রার্থীই জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ জানাচ্ছেন উপজেলার উন্নয়নে নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আহ্বান; আবার কেউ বলছেন উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত করতে পুরনোতেই ভরসা রাখতে। তবে নির্বাচনের মাঠে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বারেক সরকার ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল দাশ বাবুকে হেভিওয়েট প্রার্থী মনে করছেন ভোটাররা। ভোটে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বাবুল দাশ বাবু যে মেয়াদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তখন আব্দুল বারেক সরকার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বাবুল দাশ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বারেক একই পদেই দায়িত্ব পান। তবে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজের ছেলেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মনৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে ভোটে দাঁড় করিয়ে দলের পদ হারান আব্দুল বারেক। শেষাবদি সেই নির্বাচনে ছেলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও স্বপদ ফিরে পাননি তিনি। কিন্তু দলের পদ না থাকলেও দৃশ্যত উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বারেক সরকারই।
নির্বাচনের পরিবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল দাশ বাবু দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষ আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। বর্তমান–প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যানরাও আমার জন্য জনসংযোগ করছেন। ভোটের মাঠে ভালোই সাড়া পাচ্ছি। উপজেলার পাহাড়ি–বাঙালি সকলেই আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। তবে প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিষোদগার ছড়াচ্ছেন।’
এদিকে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বারেক সরকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমি জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তবে আনারস প্রতীকের (বাবুল দাশ বাবু) প্রার্থীর কর্মীরা আমার কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র গেলে বাড়িছাড়া করবে বলে। আমি নির্বাচনি প্রচারে গেলেই বলে দিই কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক ও উসকানিমূলক কথা যেন কেউ না বলে। বাবুল দাশও বাংলাদেশের নাগরিক, আমিও বাংলাদেশের নাগরিক। নির্বাচনে এখানে চারজন প্রার্থী হয়েছেন জনগণ যাকে ভোট দেবেন তিনিই বিজয়ী হবেন।’
বাঙালি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি কোনো প্রার্থী নেই। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল দাশ বাবুকে সমর্থন দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। লংগদু উপজেলায় শক্ত সাংগঠনিক অবস্থানে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও (জেএসএস) বাবুল দাশকে সমর্থন দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা দাবি করেন, লংগদুতে তাদের দলের নিজস্ব কোনো প্রার্থী নেই। নির্বাচনে তারা একজনকে সমর্থন দেবেন। কিন্তু কাকে সমর্থন দিচ্ছেন মসেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
লংগদু উপজেলায় এবারের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন টিউবওয়েল প্রতীকে তোফায়েল আহমেদ বাবুল, বই প্রতীকে রকিব হোসেন ও চশমা প্রতীকে কল্যাণ প্রিয় চাকমা। অন্যদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম ফুটবল প্রতীকে ও ফাতেমা জিন্নাহ কলস প্রতীকে। উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৬১ হাজার ২৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩১ হাজার ৮৭৭ জন, নারী ভোটার ২৯ হাজার ৩৮৬। ভোটকেন্দ্র ২৩টি।