দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করেছে চট্টগ্রামের শতবর্ষী ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। গতকাল জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ–২০২৪ এর ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে চট্টগ্রামের নারী শিক্ষা বিস্তারের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সারাদেশে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে।
গতকাল দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ার খবরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আজ সকাল ১১টায় স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আনন্দ–উৎসবের আয়োজন করেছেন।
এবার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থানা থেকে শুরু করে জেলা এবং বিভাগীয় সব পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সর্বশেষ গতকাল ঢাকা গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুলে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে ৮ বিভাগের ৮টি এবং ঢাকা মহানগরীর ১টিসহ ৯টি বিভাগীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রতিয়োগিতায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গৌরব অর্জন করে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। মোট ১৬টি বিষয়ের ওপর বরেণ্য শিক্ষাবিদগণ বিচারক হিসেবে এই বিচারকার্য সম্পন্ন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ থেকে প্রতি বছর এই আয়োজন হয়ে থাকে।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাজল কান্তি দাশ বলেন, আমাদের স্কুল প্রথমে থানা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ হয়েছে, তারপর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে, এরপর বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে এবং আজকে (গতকাল) ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিয়োগিতায় সারাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে। এই গৌরব শুধু ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নয়, সারা চট্টগ্রামের।
জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করায় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ওএফএম ইউসুফ আজাদীকে বলেন, নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থানা থেকে শুরু করে জেলা, জেলা থেকে বিভাগ এবং সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ১৬টি ক্যাটাগরিতে নম্বরের ভিক্তিতে মূল্যায়ন হয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয়। আজকের এই কৃতিত্বের জন্য আমি আমার সকল শিক্ষক–শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের শিক্ষকরা তাদের পেশার প্রতি দায়িত্বশীলতার অঙ্গীকার নিয়ে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করে থাকেন। শিক্ষক–শিক্ষর্থী সকলেই প্রতিষ্ঠানকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। অভিভাবকদেরও এখানে ভূমিকা রয়েছে। শেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি কাজের স্পৃহাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। অনুপ্রাণিত করে। ভবিষ্যতে সাফল্যের এ ধারা আমরা অব্যাহত রাখব।
তিনি বলেন, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এই অঞ্চলে নারী শিক্ষার প্রসারে আলো ছড়িয়ে আসছে সুদীর্ঘ ১১৭ বছর ধরে। ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ এই অঞ্চলের অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দুই শিফটে ৫৩ জন মেধারী শিক্ষক ৫শ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ২১শ’ শিক্ষার্থীর মাঝে প্রতিদিন আলো বিতরণ করছেন। এসএসসি ফলাফলে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি জেলার মধ্যে বরাবরই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে আসছে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩৩২ জন জিপিএ–৫ পেয়েছে।
কীভাবে নির্বাচিত হয় দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে সারাদেশে কয়েক ধাপের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত করে দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এ সংক্রান্ত নীতিমালায় দেখা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রতি বছর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করে থাকে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় কয়েক ধাপের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠদের বাছাই করা হয়।
প্রতিটি বিভাগে সেরা নির্বাচনের জন্য ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে বিভিন্ন বিষয়ের মূল্যায়ন করা হয়। উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ মূল্যায়ন করা হয়।