আলোকচিত্র শিল্পী নাসির আলী মামুন। পাঁচ দশক ধরে দেশ–বিদেশের খ্যাতনামা, কৃতী মানুষের প্রতিকৃতি আলোকচিত্রে ধারণ করে চলেছেন। তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে, ‘ছায়াবন্দনা’ (নাসির আলী মামুন: ইন প্রেইজ অব শ্যাডোজ)। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও বিষুব এর যৌথ উদ্যোগে অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী নির্মাতা মকবুল চৌধুরী এক ঘণ্টার এই তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোলাকার প্রোডাকশন এর প্রযোজনা করেছে। তথ্যচিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন ব্রিটিশ সংগীত পরিচালক জ্যাক ব্লুর।
শৈশব থেকেই আলোকচিত্রের প্রতি অনুরাগ ছিল নাসির আলী মামুনের। প্রতিকৃতি ধারণ শুরু করেছিলেন ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি তোলার মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি গত পাঁচ দশকে দেশের সাহিত্য, শিল্প–সংস্কৃতি, রাজনৈতিক জগতের প্রায় সব কৃতী মানুষের আলোকচিত্র গ্রহণ করেছেন। শুধু দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও কৃতী মানুষের মুখ খুঁজে নিয়েছে তাঁর ক্যামেরার লেন্স। অ্যালেন গিন্সবার্গ, গুন্টার গ্রাস, মাদার তেরেসা, মিখাইল গর্বাচেভ থেকে অমর্ত্য সেনসহ অনেকের মুখচ্ছবি ধারণ করেছেন তিনি। প্রায় আট হাজার মানুষের লক্ষাধিক ছবি তুলেছেন নাসির আলী মামুন। তাঁর তোলা এসব সাদা–কালো ছবি এক নান্দনিক সুষমা সৃষ্টির পাশাপাশি ছবির মানুষটির ব্যক্তিত্বকেও ফুটিয়ে তোলে। দেশ–বিদেশে তাঁর ছবির অর্ধশতাধিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পেয়েছেন শিল্পকলা পদক, ডেইলি স্টার আজীবন সম্মাননা, বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ।
তথ্যচিত্রে নাসির আলী মামুনের জীবন–কাহিনী তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর তোলা বিখ্যাত মানুষদের প্রতিকৃতি, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক, ছবি তোলার নেপথ্য কাহিনীও তুলে ধরা হয়েছে। মোট ১২টি পর্বে ভাগ করে তাঁর জীবন ও কর্ম এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে।
নির্মাতা মকবুল চৌধুরী বলেন, নাসির আলী মামুনের সঙ্গে ১৯৯৫ সালে তাঁর পরিচয় হয়েছিল লন্ডনে। তখন থেকেই তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে কাজ শুরু হয় গত পাঁচ বছর থেকে। মামুন একজন অক্লান্ত শিল্পী, যিনি কোনো আর্থিক সুবিধার কথা না ভেবে আলোকচিত্রের এই বিশেষ মাধ্যমটির চর্চা করে চলেছেন। শিল্পের প্রতি তাঁর এই সংগ্রামকে তুলে ধরতেই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রুনো লাক্রাম্প।